পাকস্থলী ও অন্ত্রের ক্যান্সার
আমরা যে খাবার গ্রহণ করি সেই খাবার খাদ্যনালি বেয়ে জমা হয় যে থলিতে, তার নাম পাকস্থলী। এ পাকস্থলী নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে মারাত্মক একটি রোগ হচ্ছে পাকস্থলীর ক্যান্সার। ক্যান্সার হচ্ছে কোনো কোষের অবাঞ্ছিত বৃদ্ধি, যার সঙ্গে তার জন্মদাতা কোষের কোনো সম্পর্ক নেই। কোষবৃদ্ধির কারণ সরিয়ে নিলেও তাদের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের এ রোগ বেশি হতে দেখা যায়। এর নির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। যেমন: ফাস্টফুড, মাছ-মাংস, বিভিন্ন রাসায়নিক রং ও সুগন্ধি ব্যবহার করা খাবার, টিনজাত খাবার ইত্যাদি ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়। আবার বিশেষ করে ভৌগোলিক সীমারেখায় পরিবর্তিত খাদ্যাভাস এ রোগের ওপর প্রভাব ফেলে। খাবারের পাশাপাশি আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে-যাদের রক্তের গ্রুপ ‘এ’ তারা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। এমনকি কোনো কারণে পাকস্থলীর কোষতাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটলেও এ রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেসব রোগীর ভিটামিন বি-১২ অভাবজনিত রক্তশূন্যতা আছে তাদের এ ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে বলব পাকস্থলীর ক্যান্সারের একমাত্র কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। এছাড়া রেডিওথেরাপি এবং ক্যান্সার নিরোধক ওষুধ দিয়েও এর চিকিৎসা করা হয়। কোন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন, তা নির্ভর করে রোগের ধরন ও স্তরের ওপর। অর্থাৎ রোগটি কতখানি ছড়িয়ে পড়েছে তার ওপর। ক্যান্সার শুরুতে ধরা পড়লে যথাযথ চিকিৎসায় রোগীর অবস্থার উন্নতি হয়। দেরি হলে রোগ জটিল হয়ে পড়ে।
পাকস্থলী ক্যান্সার, রোগের প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত বেশি জাপানে। জেনেটিক ও পরিবেশগত এই দুটোই বেশিরভাগ ক্যান্সারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত। হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি, খাদ্যে নাইট্রেট ও নাইট্রাইটের উপস্থিতি, ধূমপান, শিল্পে ব্যবহারের বর্জ্য থেকে নিঃসৃত বিষ/কার্বন, পূর্বের পাকস্থলীর অপারেশন এ রোগের অন্যতম কারণ। হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক একটি ব্যাকটেরিয়াকে পাকস্থলীর আলসারজনিত সমস্যার কারণ মনে করা হয়। এ ব্যাকটেরিয়ার কারণে পাকস্থলীতে প্রদাহজনিত যে পরিবর্তন হয়, তা থেকেও পাকস্থলীর ক্যান্সার হতে পারে।
উপসর্গ: রক্তশূন্যতা, ওজন হ্রাস, বমি বমি ভাব, কালো পায়খানা, রক্তবমি, উপরের ব্যথা ইত্যাদি। এছাড়াও পেটে পানি আসা, পেটে চাপ অনুভব করা এ রোগের লক্ষণ হতে পারে।
পরীক্ষা নিরীক্ষা: এন্ডোসকপি, বেরিয়ামমিল এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ব্লাড, পেটের সিটিস্ক্যান মূলত এই রোগ নির্ণয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
অন্ত্রের ক্যান্সার: অন্ত্রে জন্মানো ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই অন্ত্রের ক্যান্সার বলা হয়। এই ক্যান্সারটি ৪০-৫০ বয়সীদের মাঝে বেশি দেখা যায়। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মলের সাথে রক্ত যাওয়া, বমি, পেট ব্যথা ইত্যাদি। এই ক্যান্সারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
হজমতন্ত্রে যেসব ক্যান্সার হয় তার মধ্যে অন্ত্রের ক্যান্সারের অবস্থান দ্বিতীয়। পাকস্থলীর ক্যান্সারের পরেই এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ৪০ বছর বয়সের পরেই সাধারণত এই ক্যান্সারটি বেশি হয় এবং ৩০ বছরের নিচে এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ১৫%। পুরুষদের এই ক্যান্সারটি বেশি হয়ে থাকে। কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রয়োজন সচেতনতা।
কোলন ও রেকটাল ক্যান্সার যুক্তরাজ্যের একটি বড় সমস্যা। মেয়েদের তুলনায় পুরুষের এ রোগ বেশি। খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস এই রোগের অন্যতম কারণ। আঁশযুক্ত খাদ্য কম খাওয়া, চর্বি জাতীয় খাদ্য বেশি খাওয়া, যাদের পূর্বপুরুষের অন্ত্রের ক্যান্সার হয়েছিল, তাদের পরবর্তী জেনারেশনে এই রোগ হওয়ার চান্স থাকে। ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থায় কোনো প্রকার ব্যথা ছাড়াই মলের সঙ্গে হালকা লাল রঙের রক্ত দেখা যায়। তবে ক্যান্সার এডভান্স পর্যায়ে চলে গেলে সেক্ষেত্রে রক্তের রং আরও গাঢ় হয়। এছাড়াও হজমে গোলমাল দেখা দেয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাব পুরোপুরি না হওয়া এবং পায়খানায় পরিবর্তন দেখা যায়।
ক্যান্সারের কারণে অন্ত্রের গহ্বর সরু হয়ে যায়। এ কারণে হজমে বিভিন্ন রকম অসুবিধা দেখা দেয়। ফলে রক্তশূন্যতা, ওজন হ্রাস, ক্ষুধামান্দ্য ইত্যাদি দেখা দেয়। ক্যান্সার এডভান্স পর্যায়ে চলে গেলে তা অন্যান্য প্রত্যঙ্গ যেমন পিত্ত থলি, প্রোস্টেট ইত্যাদিতেও ছড়িয়ে পড়ে, ফলে প্রস্রাবে জ্বালা যন্ত্রণাসহ বিভিন্ন রকম অসুবিধা দেখা দেয়। এই ক্যান্সারটি অনেক সময় লিভারেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, ফলে জন্ডিস ও লিভার বড় হয়ে যেতে পারে। কোনো প্রকার লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করা উচিত।
ক্যান্সার কী?
বিশ্বের সমস্ত প্রানীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারনভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। সাধারনভাবে বলতে গেলে যখন এই কোষগুলো কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। একেই টিউমার বলে। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিয়োপ্লাসিয়া (টিউমার) বলে, এবং সেরকম ক্রিয়া যুক্ত কোষকে নিয়োপ্লাস্টিক কোষ বলে। নিওপ্লাস্টিক কোষ আশেপাশের কলাকে ভেদ করতে না পারলে তাকে বলে নিরীহ বা বিনাইন টিউমার। বিনাইন টিউমর ক্যান্সার নয়। নিওপ্লাসিয়া কলা ভেদক ক্ষমতা সম্পন্ন হলে তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার, এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনক্ষম ভেদক ক্ষমতাইযুক্ত কোষগুলিকে ক্যান্সার কোষ বলে। অনেক ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হয়, পরে তার মধ্যেকার কিছু কোষ পরিবর্তিত (ট্রান্সফর্মেসন) হয়ে ম্যালিগন্যান্ট (অর্থাৎ ভেদক ক্ষমতাযুক্ত) হয়ে যায়। তবে বিনাইন টিউমার ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবেই তার কোন স্থিরতা নেই। কিছু বিনাইন টিউমার সদৃশ ব্যাধি আছে যাতে ক্যান্সার হওয়া অবস্যম্ভাবী – এদের প্রি-ক্যান্সার বলে। নামে বিনাইন অর্থাৎ নিরীহ হলেও বিনাইন টিউমারও চাপ দিয়ে আশেপাশের কলার ক্ষতি করতে পারে। মেটাস্টাসিস হলো ক্যান্সারের একটি পর্যায়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য কলাকে ভেদ করে ও রক্ত, লসিকাতন্ত্র (Lymphatic System) ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী কলায় ছড়িয়ে যায়।
ক্যান্সারের কারণ :-
ঠিক কি কারণে ক্যান্সার হয় সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সাধারণ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে।
বয়স :
সাধারণতবয়সযতবাড়তেথাকেক্যান্সারেআক্রান্তহওয়ারঝুঁকিওততবাড়তেথাকে, কারণএসময়েশরীরেররোগপ্রতিরোধক্ষমতাধীরেধীরেকমতেথাকে।একহিসেবেদেখাযায়যতমানুষক্যান্সারেআক্রান্তহয়তাদেরশতকরা৭০ভাগেরইবয়স৬০বছরেরওপর।
খাবার এবং জীবনযাপনের ধারা
খাবার এবং জীবনযাপনের ধারার সাথে ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে গবেষকরা। যেমন, ধুমপান বা মদ্যপানের সাথে ফুসফুস ও কন্ঠনালরি এবং যকৃৎ বা লিভারের ক্যান্সারের যোগাযোগ রয়েছে। তেমনই ভাবে পান- সুপারি, জর্দা , মাংস, অতিরিক্ত লবন, চিনি ইত্যাদি খাবারের সাথেও ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে। যারা সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম কম করে তাদের মধ্যেও ক্যান্সারের প্রবণতাটা বেশি।
পারিবারিক ইতিহাস :
ক্যান্সারের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই কারণে পরিবারের কারো যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে তাহলে অন্যদেরও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়।
পরিবেশ এবং পেশাগত কারণ :
রাসায়নিক পদার্থের সাথে ক্যান্সারের অনেক বড় একটা সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, মেসোথেলিওমিয়া-তে (এক ধরনের দূর্লভ ক্যান্সার, এতে ফুসফুসের চারপাশ এবং পেটের দিকের কোষগুলো আক্রান্ত হয়) আক্রান্তদের ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই এসবেস্টস ধাতুর সংস্পর্শে আসার কারণে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারণত জাহাজ তৈরির শিল্পের সাথে যারা জড়িত তাদের এই ধাতুর সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। এই কারণেই অনেক দেশে এই ধাতুর ব্যবহার নিষিদ্ধ। একইভাবে রঙের কারখানা, রাবার বা গ্যাসের কাজে যারা নিয়োজিত তারা এক ধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে মুত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে অনেক দেশে এসব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিবেশগত কারণের অন্যতম একটা হচ্ছে সূর্য। রোদে বেশিক্ষণ থাকার কারণে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তেজস্ক্রিয়তার কারণেও বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হোয়ার ঝুঁকি থাকে।
ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ :
একেক ক্যান্সারের জন্য একেক ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হচ্ছে:
- খুব ক্লান্ত বোধ করা
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- শরীরের যে কোনজায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেয়া
- দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙ্গা
- মলত্যাগে পরিবর্তন আসা (ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য) কিংবা মলের সাথে রক্ত যাওয়া)
- জ্বর, রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া
- অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমা
- অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া
- ত্বকের পরিবর্তন দেখা যাওয়া
ক্যান্সারের চিকিৎসা :
ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
অস্ত্রোপচার :
যে জায়গাটি ক্যান্সার আক্রান্ত হয় সেটির ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো এবং তার আশেপাশের কোষগুলোকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে সরিয়ে ফেলা হয়। ক্যান্সার যদি অল্প একটু জায়গা জুড়ে থাকে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে এ ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়।
রেডিওথেরাপি :
নিয়ন্ত্রিতভাবে শরীরের অংশবিশেষে তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করে সেই জায়গার কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়।
কেমোথেরাপি :
এই ব্যবস্থায় ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে অ্যান্টি-ক্যান্সার (সাইটোটক্সিক) ড্রাগস বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ৫০টিরও বেশি ধরনের কেমিওথেরাপি ওষুধ রয়েছে। এগুলোর কোনকোনটা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবে খেতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ওষুধগুলোকে স্যালাইনের সাথে বা অন্য কোনভাবে সরাসরি রক্তে দিয়ে দেয়া হয়। রক্তের সাথে মিশে এই ওষুধগুলো শরীরের যেখানে যেখানে ক্যান্সার কোষ রয়েছে সেখানে গিয়ে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে।
হরমোন থেরাপি :
শরীরের কিছু হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন করার মাধ্যমে এই চিকিৎসা করা হয়। শরীরের বৃদ্ধির সাথে হরমোনের একটা সম্পর্ক রয়েছে। কোন কোন ক্যান্সার এই হরমোনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। ফলে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে ক্যান্সারকে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে হরমোন থেরাপি ব্যবহৃত হয়।
সহায়ক চিকিৎসা :
ক্যান্সারের শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের মানসিক চিকিৎসার ব্যাপারে এখন জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীরা বেশ মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যান, অনেকে মানসিকভাবে ভেঙ্গেও পরেন। এই কারণে অনেক সময়ে তাদের অবস্থা বেশি গুরুতর না হলেও অনেকে দ্রুত মারা যান। ফলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা এবং উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের সেবা দেয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠন কাজও করে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্তদের একটি গ্রুপ গঠন করা, যেখানে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে পারেন। এর পাশাপাশি যোগ, মেডিটেশন ইত্যাদির মাধ্যমেও রোগীদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার শিক্ষা দেয়া হয়। এর পাশাপাশি মানসিক স্বস্তির জন্য কেউ যদি ধর্মীয় বা সামাজিক কোন কাজে নিয়োজিত হতে চান সে ব্যাপারেও তাদেরকে উৎসাহ দেয়া হয়।
অন্যান্য চিকিৎসা :
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে এ ধরনের ওষুধ তৈরির ব্যাপারে এখন গবেষণা চলছে। এছাড়াও ক্যান্সারের ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনো এগুলো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ :
গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত কিছু ব্যাপার মেনে চললে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকখানি কমানো যায়। যেমন:
ব্যায়াম এবং ক্যান্সার :
প্রত্যেকদিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা যেমন-দৌড়ানো, সাইকেল চালনো, নাচ করা, হাঁটা,
খাদ্যভ্যাস ও ক্যান্সার :
ধুমপান বা মদ্যপান ছেড়ে দেয়া বা পরিমাণ কমিয়ে আনা। পান-সুপারি জর্দা, তামাকপাতা খাওয়া বন্ধ করা। চর্বিজাতীয় পদার্থ কম খাওয়া। সম্ভব হলে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেয়া বা কমিয়ে দেয়া। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফলমূল এবঙ আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া।
সচেতনতা :
বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন মেখে বের হওয়া। নিয়মিত ডাক্তার দেখানো। সেটা সম্ভব না হলে শরীরে কোন অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া। ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে অবশ্যই নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে শরীর পরীক্ষা করানো।
ব্রেস্ট ক্যান্সার ও চিকিৎসা :-
ব্রেস্ট ক্যান্সার ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
আমাদের শরীরে সর্বদায় স্বাভাবিক নিয়মে নতুন নতুন কোষ সৃষ্টি হয় প্রয়োজন মোতাবেক স্তন ও এর বাহিরে নয়। যদি কোন কারনে অপ্রোজনীয় ভাবে ব্রেস্টে নতুন কোষ সৃষ্টি হয়, আর স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি ঘটিতে থাকে এবং চাকা অথবা পিন্ড আকার ধারন করতে থাকে তবে একে স্তন টিউমার বলা হয়। এ টিউমারটি যদি স্বাভাবিক কোষ ধারা হয়ে থাকে তবে তাকে অক্ষতিকারক /বিনাইন টিউমার বলে।যা ক্যান্সার নয়। আর যদি অস্বাভাবিক কোষ ধারা তৈরি হয়ে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটতে থাকে তবেই তাকে ক্যান্সার বা ম্যালিগন্যান্ট বলা হয়। এর সূত্র পাত কোষে হয়ে গ্ল্যানডিউলার টিস্যু সহ স্তনের সবকটি লোবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে ডাক্টস এবং লবিউলসে। স্তন ক্যান্সার কোন কোন কারনে হতে পারেঃ স্তন ক্যান্সারের এবং যে কোন ক্যান্সারেরই প্রকৃত কারণ কারো জানা নেই। তবে কিছু কিছু ফ্যাক্টুরকে জোরালো ভাবে দায়ী করা হয়ে থাকে বিশেষ করে যেমন ৪০ উর্ধে বেশী বয়সে এর ঝুকিটা বেশী দেখা যায় বা হয়ে থাকে। কিন্তুু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য বর্তমানে ১৮ বৎসরের এবং ২৬ বৎসরের দুটি মেয়েকে চেম্বারে ব্রেস্ট ক্যান্সার সহ আসতে দেখা গেল। বংশানুক্রমে :- এই মাত্র উপরে যা পড়লেন , ২টি মেয়ের কথা তাদের পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে দেখা গেল একজনের মায়ের বর্তমানে ক্যান্সার আছে, অন্যজনের বংশেও আছে। মা, বোন, খালা, ফুফুদের থাকলে ঝুকিটা বেড়ে যায় কয়েক গুন। রক্তের সম্পর্কিত কোন পুরুষের ক্যান্সার থাকলেও উক্ত মহিলার ঝুকি থাকে। ফ্যামিলিয়াল/জেনিটিক:- ব্রেস্ট ক্যান্সার জিন বিআরসিএ বা বিআরসিএ যে কোনটা বহন করলে ঝুকি থাকে। মা হবার বয়স :- ৩০ বৎসরের বেশী বয়সে, যদি কেউ মা হয় তবে তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। মদ্য পান :- মদ্যপান স্তন ক্যান্সার সহ,মুখ, গলা সহ অন্যান্য অর্গানের ক্যান্সার ঝুকি বাড়ায়। ধূমপান :- যে সকল মায়েরা ধুম পানের সাথে জড়িত বা যাদের ঘরে ধূম পায়ী আছে তাদের থেকেও আক্রান্ত হতে পারেন। সাদা/জর্দ্দা/ পান মশলা :- এক গবেষণায় দেখা গেছে সুপারী তা বাড়িয়ে দিতে পারে। আর ধূমপানের চেয়ে সাদা/জর্দ্দা বেশি ক্ষতি করতে পারে। অতিরিক্ত ওজন :- যাদের শারীরিক ওজন বেশি থাকে, শরীরে মেদের পরিমান বেশি থাকে। অতিরিক্ত ফেটি খাবার :- যাদের অভ্যাস আছে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাদ্য বেশি খাওয়া, যারা শাক জাতীয় খাবার কম খায়,গোস্ত জাতীয় খাবার বেশি খায়। অতিরিক্ত রেডিয়েশন :- যাদের শরীরে খুব বেশি এক্স্-রে করা হয়েছে, যারা খুব বেশি রেডিয়েশন চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের এ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে অন্যদের তুলনায়। ঔষধের অপব্যবহার :- কিছু কিছু ঔষধ ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। একথাটা শুনলেই অনেকে মনে করেন যে এলোপ্যাথিক ঔষধেই তা করে থাকে, তা ঠিক নয়। অনির্বাচিত প্রয়োজনের অতিরিক্ত হোমিওপ্যাথিক ঔষধও এমনটি করতে পারে।যার ফলে এক ডোজ খাওয়ার পর রোগীর পুনরায় ডায়াগনোসিম ছাড়া ঔষধ সেবন ঠিক নয়। মেনোপজ :- দেরিতে মেনোপজ হলেও ঝুকি আছে।আবার কেউ মনে করে মেনোপজ আসা মানে যৌন জীবনের পরিসমাপ্তি তাই হরমোন জাতীয় ঔষধ খেয়ে মাসিক দীর্ঘায়িত করতে চান।যা স্তন ক্যান্সার সহ অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুকি বাড়িয়ে দিতে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়িকেও এব্যারে দায়ী করা হয়ে থাকে। স্তন সিস্ট বা চাকা :- দীর্ঘদিন স্তনে সিস্ট থাকলে, যদি বড় হয়ে যায় সাথে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি থাকে।স্তনের চাকা বা বিনাইন টিউমার যদি এমনি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পাশাপাশি অস্বাভাবিক থাকে। আপনি যে ভাবে বুঝবেন স্তন ক্যান্সার হয়েছেঃ যে কোন স্তনে প্রথমে এক বা একাধিক ছোট আকারে টিউমার/চাকা বা ছোট গোটা আকারে দেখা দেয়।
- মাসিক ঋতুস্রাবের সময় বেশি অনুভব হতে থাকে।
- স্তনের বোটা হতে রস নিঃসৃত হতে পারে, তা পরিস্কার বা রক্তের মত হতে পারে।
- প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় লসিকা গ্রন্থিতে থাকে তেমন বেদনা থাকে না।
- চাকা বা গুটি নড়া-চড়া করানো যায়।
- পরবর্তীতে নড়া-চড়া না করে স্থির থাকে।
- ব্যথা বেদনা হতে থাকে। ব্যথার ধরণ বিভিন্ন রকম হতে পারে।চিড়িক মারা ব্যথা,ঝিমধরা ব্যথা বা সর্বদায় ব্যথা থাকা।
- অস্বাবধানতায় চাপে, রিক্সার ঝাকিতে ব্যথা হতে পারে।
- ব্রেস্টের আকার-আকৃতির পরিকর্তন হতে পারে।
- স্তনের ত্বকের কালার পরিবর্তন হতে পারে।
- যে কোন এক স্তনের ক্যান্সার পরবর্তীতে উভয় স্তনে,বুকের হাড়ে, গলার নীচে, পরবর্তীতে হাড়ে শিরদাড়ায় এবং শরীরে অন্যান্য অর্গানে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
স্তন ক্যান্সারের স্টেজ:- স্তন ক্যান্সারের তীব্রতানুযায়ী
- স্টেজ- ১ ইঞ্চির কম স্থানে কোথাও না ছড়িয়ে সীমাবদ্ধ থাকলে।
- স্টেজ-২: ১ ইঞ্চির কম বটে কিন্তু লসিকা গ্রস্থিতে ছড়িয়েছে বা ২ ইঞ্চি পরিমানে কিন্তু কোথাও ছড়ায়নি।
- স্টেজ-৩: টিউমারের আকার ২ ইঞ্চির বেশি হলে এবং লসিকা গ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়লে। বা যে কোন আকারের টিউমার গ্রন্থি গুলোর একে অপরের সাথে লেগে গেলে।
- স্টেজ-৩/বি: যে কোন আকারের টিউমার, ত্বকে, স্তনের নীচে, বুকে ছড়িয়ে পড়লে বা ইন্টারনাল মেমারী লসিকা গ্রন্থিতে অবস্থান করে।
- স্টেজ-৪: এ অবস্থায় ক্যান্সার আর স্তনে সীমাবদ্ধ না থেকে দূরবর্তী স্থানে যেমন- দূরবর্তী লসিকা গ্রন্থি, ফুসফুস,বুকে,হাড়ে ছড়িয়ে যায়।
স্তন ক্যান্সার নির্ণয় :- আপনি নিজেই আপনার স্তন পরীক্ষা করে দেখেন কোন রকম অসাধারনতা পরিলক্ষিত হয় কিনা। এবং আজকের লিখিত উপসর্গের কোনটা উপস্থিত আছে কিনা। শুধু মাত্র টিউমার হলেই ক্যান্সার নয়। প্রয়োযনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এ ব্যাপারে। আক্রান্ত ব্রেস্টের এক্স-রে করে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে, মেমোগ্রাপি করে, এফ এন এ সি করে, বায়োপসি করে জানতে পারেন কোন অবস্থায় বা কোন স্টেজে আছে। চিকিৎসা :- প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে হোমিওপ্যাথিতে সম্পূর্ণ এবং সফল ভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব। হোমিওপ্যাথিতে বর্তমানে অনেক আরোগ্য দানকারী মেডিসিন রয়েছে যে গুলোর শর্ত হলো প্রাথমিক পর্যায় রোগ নির্ণয়, সঠিক এনামনসিস,এবং পাওয়ার, সেবন পদ্ধতি ও নির্বাচন সঠিক হলে ইনশাআল্লাহ ভাল হবেন। যে সকল হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গুলো বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন- ফাইটোলক্কা, ব্রায়োনিয়া, আর্সেনিকএলব্ , কার্ব এ্যানিমেলিস, কোনিয়াম মেকুল্যাটাম, ক্যার্সিনোসিন, এক্স-রে ইত্যাদি। প্রয়োজনে সার্জেক্যাল চিকিৎসা নিতে হবে। ক্যামোথেরাপি, রেডিওথ্যারাপি সাহায্য করতে পারে। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় :-
- যত তাড়াতাড়ি আপনার রোগ ধরা পড়বে তত তাড়াতাড়ি সুচিকিৎসা সম্ভব।
- স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে।
- অতি লজ্জা চেপে যাওয়া থেকে বিরত হয়ে গার্ডিয়ান/চিকিৎসককে বিস্তারিত জানাতে হবে।
- বয়সন্ধি কাল শুরু থেকে নিয়মিত নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করতে হবে।
- প্রতি বৎসর চিকিৎসক দ্বারা আল্ট্রাসনোগ্রাম/মেমোগ্রাফি করানো উচিত।
- ৪০ বৎসরের বেশি বয়সিদের প্রতি বছর ১ বার মেমোগ্রাফি করানো ভাল।
- যাদের বংশে আছে তাদের অতি সচেতন হতে হবে।
- যাদের নিজ পরিবারে বোন, মা,খালা, ফুফুর থাকলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ, পরীক্ষা সকল বিষয়ে যতœবান হতে হবে।
- যেহেতু সুনির্ধারিত কোন কারণ জানা নেই সেহেতু সম্ভাব্য ফ্যাক্টর গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
- পানের সাথে জর্দ্দা সাদা পাতা, পান মশলা পরিত্যাগ করতে হবে।
জরায়ুমুখে ক্যান্সার :-
জরায়ুমুখ ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সার (: Cervical cancer) নারীদের জন্য একটি ভয়াবহ ব্যাধি এবং জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন এবং প্রতি বছর ৫০ লক্ষাধিক নারী নতুন করে আক্রান্ত হন (প্রেক্ষিত ২০১০)।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার ১৫-৪৫ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, কিন্তু ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশের প্রায় ২ থেকে ২০ বছর আগেই একজন নারী এ রোগের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন। তবে সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। সাধারণত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের নারীরা স্বাস্থ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন না বলে এই রোগের বিস্তার বেশি। তবে উন্নত দেশের নারীরা এবিষয়ে সচেতন এবং উন্নত জীবনযাপনের কারণে অনেকটাই এই রোগ থেকে নিরাপদ। জরায়ু-মুখ ক্যান্সার সনাক্ত করার জন্য ‘পেপস স্মেয়ার টেস্ট’ রয়েছে, যা উন্নত দেশের নারীরা দ্বিধাহীনভাবে গ্রহণ করতে পারেন, যা অনুন্নত দেশে গ্রহণ করতে অনেক পারিবারিক ও সামাজিক বাধা রয়েছে।
জরায়ু বা বাচ্চাদানির সবচেয়ে নিচের অংশ হলো জরায়ু মুখ যা প্রসবের পথ বা যোনিতে গিয়ে মিশেছে। জরায়ুর বিভিন্ন অংশের মধ্যে এই অংশে ক্যন্সার এর আশংকা সবচেয়ে বেশি। অতিরিক্ত সাদাস্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, অতিরিক্ত অথবা অনিয়মিত রক্তস্রাব, সহবাসের পর রক্তপাত, মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবার পর পুনরায় রক্তপাত, কোমড়-তলপেট বা উড়ুতে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গগুলো জরায়ু মুখ ক্যান্সার এর লক্ষণ। অল্পবয়সেই যারা যৌনাচারে অভ্যস্ত হয়ে থাকে তাদের এই ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। একাধিক পুরুষ সঙ্গী থাকা, বা পুরুষ সঙ্গীটির একাধিক নারী সঙ্গী থাকা কিংবা ঘন ঘন বাচ্চা নেয়া ইত্যাদি কারনেও জরায়ূ মুখ ক্যান্সার হতে পারে। বাল্য বিবাহ হওয়া মেয়েদের এই রোগ হবার সম্ভাবনা বেশী।
একদিন বা একমাসে হঠাৎ করে এই ক্যান্সার হয়না স্বাভাবিক কোষ থেকে জরায়ু মুখের ক্যান্সার হতে প্রায় ১০-১৫ বছর সময় লাগে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার দ্বারা শতকরা ১০০ ভাগ রোগীই ভালো হয়ে যেতে পারে। রোগের শুরুতে উপসর্গ গুলো অল্পমাত্রায় থাকে দেখে একে কেউ গুরুত্ব দিতে চান না। এজন্য রোগীদের পক্ষে অনেক সময়ই প্রাথমিক পর্যায়ে আসা সম্ভব হয়না। দেরীতে আসলে রোগটি ছড়িয়ে পরে তখন জীবন বাঁচাতে বড় ধরনের অপারেশন এবং রেডিওথেরাপীর (Radiotherapy) প্রয়োজন হয় কিন্ত তাতেও পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হয়না।
নিয়মিত পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে যে সকল মহিলার বয়স ৩০ এর বেশী (বাল্য বিবাহ হলে ২৫ এর বেশী) তাদের প্রতি তিন বছর পর পর স্ত্রী রোগ চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য কর্মী দ্বারা জরায়ু মুখ পরীক্ষা করানো উচিত। ভায়া –VIA (Visual Inspection of Cervix with Acetic acid), প্যাপ স্মেয়ার (PAP smear) ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগের প্রাথমিক পর্যায়েই রোগটি সনাক্ত করা সম্ভব।
ফুসফুসে ক্যান্সার :-
ক্যান্সার একটি জটিল ব্যাধি। জটিলতা এবং ভয়াবহতার দিক থেকে এইডসের পরই ক্যান্সারের স্থান। ক্যান্সার হচ্ছে শরীরের কোষকলার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকৃতি। বিজ্ঞানীরা চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেকদূর অগ্রসর হওয়ার দাবি করলেও আজ পর্যন্ত ক্যান্সারের যথাযোগ্য প্রতিষেধক উদ্ভাবন করতে পারেননি। আসলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা যে সফলতা এত দিন অর্জন করেছেন, তার বেশির ভাগই জীবাণুঘটিত রোগের ক্ষেত্রে। এন্টিবায়োটিকের কল্যাণে যক্ষ্মাসহ যেকোনো জীবাণুঘটিত রোগের নিরাময় মানুষের কাছে এখন খোলামেলা ব্যাপার। কিন্তু যে রোগের জীবাণুই নেই, সেখানে করার কী আছে? এখানেই এত দিন ছিলেন ক্যান্সারের কাছে বড়ই নিরুপায় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
তবে ইদানীং ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসায় নাটকীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ফুসফুসের ক্যান্সার কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। তবে চিকিৎসার সুবিধার জন্য ফুসফুসের ক্যান্সারকে স্মলসেল কারসিনোমা এবং নন-স্মলসেল কারসিনোমাÑ এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। স্মলসেল কারসিনোমা চিকিৎসায় খরচ বেশ কম। ক্যাম্পটো নামক ওষুধ দিয়ে বর্তমানে এর চিকিৎসায় বেশ ভালো ফল পাওয়া যাবে। নন-স্মলসেল কারসিনোমা চিকিৎসায় বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে টেক্সোটিয়ার নামক ওষুধটি। তবে এর সমস্যা হলো ওষুধটি বেশ দামি।
বেশির ভাগ রোগীর পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা কষ্টকর। তবে টেক্সোটিয়াম দিয়ে চিকিৎসায় ব্যাপক সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে ক্যান্সার নিরাময়ে কেমোথেরাপি এবং বিকিরণ চিকিৎসার প্রচলন রয়েছে। এ ধারায় চিকিৎসায় রোগীর খারাপ কোষের সাথে সাথে ভালো কোষও মরে যায়। কিন্তু নতুন চিকিৎসায় শুধু ক্যান্সার-আক্রান্ত টিস্যুই লক্ষ্যবস্তু হবে। অর্থাৎ কেবল খারাপ কোষই মারা পড়বে, ভালো কোষের কোনো ক্ষতি হবে না।
এই চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম এবং এতই সম্ভাবনাময় যে, ক্যান্সার হয়তো অদূরভবিষ্যতে জীবাণুঘটিত রোগের মতো চিকিৎসাযোগ্য হয়ে উঠবে। ‘টেক্সোটিয়ার’ নামে ওষুধটি ফুসফুসের ক্যান্সারে প্রথম ও দ্বিতীয়পর্যায়ের চিকিৎসা হিসেবে প্রচলিত চিকিৎসার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। মানুষ যে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এই উদ্ভাবন আবিষ্কারগুলো তারই প্রমাণ। তবে ফুসফুসের ক্যান্সার যাতে না হতে পারে তার দিকেই বেশি খেয়াল রাখতে হবে।
ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। কারণ ধূমপান পরিহার করলে ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। যে যত বেশি মাত্রায় এবং বেশি দিন ধরে ধূমপান করবেন তার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তত বেশি বাড়িয়ে দেয়, যেমন সিগারেটের ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সাথে ভেতরে নেয়া, একটি সিগারেটকে বারবার টানতে থাকা, জ্বলন্ত সিগারেটটি হাতের আঙুলের ফাঁকে না রেখে ঠোঁটের মধ্যে রেখে নিঃশ্বাস গ্রহণ করা, নেভানো সিগারেট আবার জ্বালিয়ে খাওয়া এবং সিগারেট খেতে খেতে একেবারে শেষ পর্যন্ত টেনে খাওয়া ইত্যাদি।
পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে পারলে এবং ধূমপানের কু-অভ্যাস বন্ধ করতে পারলে একটি লোক অনায়াসেই ফুসফুসের ক্যান্সারের হাত থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।
গলায়ক্যান্সার
দ্বিতীয় কারণ সিগারেট, গুটকা বা খৈনির নেশা৷ দীর্ঘদিন ধরে তামাক জাতীয় দ্রব্যের নেশা করলে গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়৷ একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে গত ১০ বছরে আমাদের রাজ্যে বয়স্কদের পাশাপশি কমবয়সিদের মধ্যেও তামাকজাত দ্রব্যের নেশার প্রবণতা বেড়েছে৷ যার ফলস্বরূপ এরাজ্যে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে গলার ও মুখ গহ্বরের ক্যান্সারের প্রকোপ৷ প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে জিভের ক্যান্সার হয় ভাঙা দাঁতের কারণে৷ বারংবার জিভের একটা অংশ দাঁতের ভাঙা অংশ আঘাত লাগার কারণে যেখানে ক্ষত তৈরি হয়৷ যা থেকে পরবর্তীকালে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷
লক্ষণ কী কী ?
গলার ক্যান্সারের লক্ষগুলি হল – দীর্ঘ দিন ধরে কাশি হবে৷ মাঝে মাঝে কাশির সঙ্গে রক্ত বেরবে স্বরভঙ্গ হবে ৷ ক্রমাগত গলার স্বর ভাঙতে থাকবে৷ একটা সময় পরে গলার স্বর সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে যাবে খাবার খেতে সসম্যা হবে৷ যত দিন যাবে এই সসম্যা বাড়বে৷ ক্যান্সারের শেষ স্টেজে রোীর তরল খাবার খেতেও কষ্ট হবে দাঁত বা মাড়ি থেকে মাঝে মাঝে রক্ত বেরবে মুখের ভিতর দীর্ঘমেয়াদী ঘা হবে গালের ভেতরের অংশ সাদা হয়ে যাবে৷
এই সব লক্ষণগুলি দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন৷ চিকিৎসা শুরু করতে অকারণে দেরি করবে না৷
কাদের এই ধরনে ক্যান্সার বেশি হয় ?
দীর্ঘ দিন ধরে সিগারেট, গুটকা বা খৈনির নেশা করলে এই ধরনের মারণ রোে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ এছাড়াও যারা দীর্ঘদিন ধরে কয়লা খনিতে, অভ্রখনিতে, আলকাতরা বানানোর প্যাকটরিতে বা জামাকাপড় তৈরির ফ্যাকটরিতে কাজ করেন তাদেরও মধ্যে গলার ও শ্বাসনালির ক্যান্সারের প্রকোপ খুব বেশি৷
গলায় ক্যান্সার হয়েছে তা নিশ্চিত করতে কী কী টেস্ট করা হয় ?
এই সব ক্ষেত্রে সি টি স্ক্যান, হাইরেজিলিউশন সি টি স্ক্যান, এম আর আই ও বিশেষ ধরনের কিছু এক্স রে এর সাহায্য নেওয়া হয়৷
চিকিৎসা কী বাবে করা হয় ?
গলার কোন অংশে টিউমার হয়েছে তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসার ধরণ৷ জিভে বা গালে টিউমার হলে প্রথমে কেমোথেরাপি করা হয়৷ তার পর প্রয়োজন মত রেডিয়েশন বা সার্জারি কথা হয়ে থাকে৷ অনেক সময় অবার প্রথমেই সার্জারির করা হয়৷ পরে প্রয়োজন মতো রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপির সাহায্য নেওয়া হয়৷ জিভে টিউমার হলে লেজার সার্জারি করা হয়৷
ভোকাল কর্ডের ক্যানসারে আবার ব্র্যাকি থেরাপি, লিনিয়ার এক্সিলেটারের মত রেডিওথেরাপির সাহায্য নেওয়া হয়৷ ভোকাল কর্ডে বড় টিউমার হলে লেরিংগেটটমি অপারেশন করা হয়৷ কিছু ক্ষেত্রে পার্শিয়াল লেরিংগেটটমি অপারেশনও করা হয়ে থাকে৷
দ্বিতীয়বার এই ধরনের ক্যান্সার হওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে কি?
হ্যাঁ থাকে৷ তবে দ্বিতীয়বারেও যে একই জায়গায় ক্যানসার হবে এমন নয়৷ শরীরের অন্য কোনও জায়গাতেও হতে পারে৷
সব শেষে, কী কী সাবধানতা নিলে এই ধরনের ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে কতগুলি নিয়ম মেনে চলা আবশ্যিক৷
যেমন –
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে৷ তামাক জাতীয় দ্রব্যের নেশা থেকে দূরে থাকতে হবে৷ পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে যখনই রাস্তায় বেরবেন মাস্ক ব্যবহার করবেন৷ হাইব্রিড খাবার এড়িয়ে চলবেন৷ কীটনাশকের প্রভাব থেকে বাঁচতে শাক সবজি ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তার পর রান্না করবেন৷
নেক গ্ল্যান্ড টিউমার
গলার ভিতর কোন গ্লান্ডে টিউমার হয় ?
প্যারোটিড গ্ল্যান্ড, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড, চোয়ালের নীচে সাবম্যান্ডিবুলার স্যালিভারি গ্ল্যান্ড ও লিম্ফ নোড মূলত এই চারটি গ্ল্যান্ডে টিউমার হয়৷
টিউমার মানেই কী ক্যানসার ?
একদমই না৷ টিউমার হলেই তা থেকে ক্যান্সার হবে৷ এই ধারণা সর্ম্পূ ভুল৷
টিউমারটি ম্যালিগন্যান্ট কিনা জানতে কী কী টেস্ট করা হয়?
প্রাথমিক অবস্থায় আলট্রাসোনোগ্রাফি, সি টি স্ক্যান, ফাইন নিড্ল অ্যাসপিরেশন সাইটোলজি বা এফ এন এ সি এর মতো কিছু পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয়৷ টিউমারটি ম্যালিগন্যান্ট কিনা৷ এর পর্যে টিউমারের প্রকৃতি সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে রোগীকে রেডিও আইসোটপিক স্ক্যান ও বায়োপসি করার পরামর্শ দেওয়া হয়৷
টিউমারটি যদি ম্যালিগন্যান্ট না হয় সেক্ষেত্রে কী ভাবে চিকিৎসা করা হয়?
টিউমারের চিকিৎসা অনেকাংশেই নির্ভর করে টিউমারটি কী অবস্থায় আছে তার উপর৷ এই বিষয়ে জানতে প্রথমে কিছু পরীক্ষার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় টিউমারটি বাদ দিতে অপারেশন করা হবে, না ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা চালান হবে৷
টিউমারটি বাদ দেওয়ার জন্য কি ধরনের অপারেশন করা হবে এবং কতটা করা হবে, সেই সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করতেও এই সব পরীক্ষাগুলি সাহায্য করে৷ সর্বোপরি টুিণারের চিকিৎসায়ে পলোআপ ট্রিটমেন্টর গুরুত্ব অপরিসীম৷ বিশেষত অপারেশনের পরে ফলোআপ ট্রিটমেন্ট বা নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে রোগীর সুস্থ, স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়৷
চিকি‘সার মাধ্যমে কী এই ধরনের সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব৷ তবে এই ধরনের সমস্যায় তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু হওয়াটা জরুরি৷ যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু হবে, তত তাড়াতাড়ি রোগী সুস্থ হয়ে উঠবেন৷ নতুবা সমস্যা বাড়বে৷ রোগীর সুস্থ হতেও সময় লাগবে৷ তাই গলায় ব্যথা বা কোনোও ধরনের অস্বস্তি হলে, তা যতই সামান্য হোক ন কেন, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন৷ অকারণে দেরি করবেন না৷
সব টিউমারের ব্যথা হয় না৷ রোগী বুঝতেই পারেন না তার কোনও সমস্যা হয়েছে বলে৷ ফলে চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়ে যায়৷ ভোগান্তি বাড়ে রোগীর৷ এইসব ক্ষেত্রে রোগী কী করে বুঝবেন কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে?
গলার যে অংশটা ফোলর কথা নয়, সেই অংশটা অস্বাভাবিক হারে ফুললেই ডাক্তার দেখাবেন৷ ব্যথা হচ্ছে না বলে চিকিৎসা শুরু করতে দেরি করবেন না৷ যেমনটা আগেও বলেছি টিউমারের চিকিৎসায় সময়টা খুব মূল্যবান৷
পুরুষ না মহিলা, কাদের গলার টিউমার বেশি হয়?
থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে টিউমার মহিলাদের বেশি হতে দেখা যায়৷ বাকি যে সব গলার টিউমারের উল্লেখ আগে করা হয়েছে তা পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে উভয়েরই হতে পারে৷ তবে পুরুষদের মধ্যে এই সব টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা মহিলাদের তুলনায় বেশি৷
বাচ্চাদের গলায় কি টিউমার হতে পারে ?
হ্যাঁ, হতে পারে৷ বাচ্চাদের মূলত অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ডে ও লিম্ফ নোডে টিউমার হয়৷ এছাড়াও বাচ্চাদের মধ্যে লিম্ফোমা জাতীয় টিউমারের প্রকোপও খুব বেশি৷ অনেক বাচ্চার আবার জন্মগত ভাবে গলার সামনে দিকে, শ্বাসনালীর উপরে স্টিস্ট বা টিউমার থাকে৷ যা ডাক্তারি পরিভাষায় ‘থাইরোগ্লসাল টিস্ট’ নামে পরিচিত৷ অপারেশন করে এই সিস্ট বা টিউমার বাদ দিতে হয়৷
মুখের ক্যান্সার :-
মুখের ক্যান্সার কি?
মুখের ক্যান্সার এক ধরনের ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সার যা ঠোঁট, মুখের তালু,জিহ্বা, মাড়ির হাড়, মৌখিক গলবিল, লালা গ্রন্থি, চোয়াল শোষ এবং মুখের ত্বক আক্রান্ত হবার ফলে হয়ে থাকে।
মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনার হার কত?
বিভিন্ন কারনে মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনার হার নারী এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে শতকরা ১.৪৫ ভাগ থেকে ৫.৬ ভাগ পর্যন্ত হয়।
মুখের ক্যান্সার হবার কারণ কি কি?
* দীর্ঘদিন ধরে ধূমপানের ফলে।একই সাথে মদ্যপান এবং ধূমপানের ফলে।অনেক ক্ষেত্রে ধূমপান বা মদ্যপান ছাড়াও মাড়িতে ইনফেকশন হবার কারনেও এ ধরনের ক্যান্সার হতে পারে।
* মুখের অযত্নের ফলে ব্যাকটেরিয়ার গঠন হয় এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনেও ধীরে ধীরে আক্রান্ত স্থানে ক্যান্সার দেখা দেয়।
* দাঁতের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে কোন ইনফেকশনের কারনে।
* অপুষ্টি: ভিটামিন A1 মত উপাদানের অভাব, ভিটামিন B2 এবং ট্রেস উপাদান দস্তা, আর্সেনিক, জীব এর সংবেদনশীলতা মুখের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
* লিউকোপ্লাকিয়া এবং এরিথ্রোপ্লাকিয়া এর ফলেও মুখের ক্যান্সার হয়।
* আলট্রাভায়োলেট রে এর কারনে দীর্ঘদিন ধরে যারা খোলা পরিবেশে কাজ করেন তাদের মুখের ক্যান্সার হতে পারে।
* লনিজিং রেডিয়েশনের কারনে ডি এন এ এর পরিবর্তন ঘটে মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।
* ক্রনিক হেপাটাইটিস, সিরোসিস, ভাইরাস ইনফেকশনের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এধরনের ক্যান্সার হতে পারে।
মুখের ক্যান্সারের উপসর্গ কি কি?
* রং পরিবর্তন: শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী এর epithelial কোষ পরিবর্তনের ফলে মৌখিক গহ্বর এর সাদা, বাদামী ও কালো মধ্যে রং পরিবর্তন দেখা গেলে,. বিশেষত যখন শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী রুক্ষ হয়ে যায় এবং ক্যাভিটি লিউকোপ্লাকিয়া এবং এরিথ্রোপ্লাকিয়া হয়।
* Unhealed ঘাত: মুখের ঘাত সাধারণত দুই সপ্তাহের বেশি হলে,ব্যাথা অনুভূত হলে তা মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে ।
* সুস্পষ্ট ব্যথা: সাধারণত, মুখের ক্যান্সারে কোন ব্যথা হয়না কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত স্থানে ঘর্ষণ অনুভূতি হয়, যখন স্পষ্ট ব্যথা অনুভূত হয় তখন বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। রোগীর কান ও গলায় ব্যথা অনুভব হতে পারে।
* ফোলা লিম্ফ নোডস বা লসিকা: অধিকাংশ মুখের ক্যান্সারের ফলে কাছাকাছি ঘাড় এর লিম্ফ নোডস বা লসিকা আক্রান্ত হয় , লিম্ফ নোডস বা লসিকা ফুলে যেতে পারে।
* ডাইফাংশন: মুখের ক্যান্সারের ফলে চর্বণ পেশী এবং ম্যান্ডিবুলার আক্রান্ত হয়ে মুখের কার্যকলাপে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে পারে।
মুখের ক্যান্সারের পরীক্ষণঃ
* মুখ ও ঘাড় পরীক্ষা: ঘাড় পরীক্ষণের ক্ষেত্রে মাথা যতটা সম্ভব পেছন দিকে ঝুঁকিয়ে দেখুন কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা অনুভব হয় কিনা। হাতের মাধ্যমে দুই ঘাড়ের দুই পাশ ধরে দেখুন এবং চর্বন গ্রন্থি ধরে দেখুন কোন ধরনের ব্যাথা এবং ঘাড়ের দুই পাশের মধ্যে পার্থক্য অনুভব হয় কিনা।
* ঠোঁট পরীক্ষা: উভয় ঠোঁট এর বহিঃস্থ পার্শ্ব, অভ্যন্তরে ধরে দেখুন উপড়ে বা নিচের দিকে কোন পার্থক্য অনুভূত হয় কিনা।
* আঠার পরীক্ষা: আপনার মাড়ির মধ্যে আঙুল রেখের দেখুন পূর্ববর্তী অবস্থায় এবং বর্তমানে মুখের আঠার মধ্যে কোন পার্থক্য অনুভূত হয় কিনা।
* গণ্ডদেশ পরীক্ষা: মুখ বন্ধ করে দুইপাশ থেকে কানের দিকে টানুন,দুইপাশের থুঁতনিতে ধরে দেখুন কোন অস্বাভাবিকতা অনুভব হয় কিনা।
* আপনার জিহ্বা পরীক্ষা করুন: আপনার জিহ্বা প্রসারিত করুন,জিহ্বার পৃষ্ঠতল হাতিয়ে দেখুন এরপর জিহ্বা বাম এবং ডান দিকে সঞ্চালন করে দেখুন কোন ক্ষত বা অস্বাভাবিকতা দেখা যায় কিনা।
* জিহ্বা এর উপরিতল পরীক্ষা করুন।
* গলবিল এবং তালু পরীক্ষা করুন: মাথা পেছনে নিতে নিতে আপনার মুখ খুলে “অই” বলে দেখুন, গলবিল এবং তালুতে অস্বাভাবিকতা আছে কিনা।
লিভার ক্যান্সার.
লিভার মানব দেহের অতি গরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। বাংলায় যাকে আমরা কলিজা বলি। লিভারের অবস্থান হচ্ছে পেটের উপর ভাগের ডানদিকে। এর ওজন প্রায় দেড় কেজির মত। লিভার দেহের সব প্রকার খাদ্যে মেটাবিলিজম-এ সাহায্য করে। আমরা প্রতিদিন যে খাদ্য গ্রহণ করি তা লিভারের মাধ্যমে শরীরের অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সরবরাহ হয়।
লিভার ক্যান্সার : লিভার ক্যান্সার সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে। একটি প্রাইমারি ক্যান্সার ও অন্যটি সেকেন্ডরি ক্যান্সার। প্রাইমারি লিভার ক্যান্সার লিভার সেল থেকে উৎপত্তি হয়। ক্যান্সার শরীরের অন্য কোন অঙ্গ বা অন্ত্র যেমন-পাকস্থলী, ক্ষুদ্র বা বৃহৎ অন্ত্র, কিডনি ও ফুসফুস থেকে লিভারে ছড়িয়ে পড়লে তাকে সেকেন্ডারি ক্যান্সার বলে।
লিভার ক্যান্সা কেন হয় : আমাদের দেশে লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ হচ্ছে: হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে এ দেশে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত শতকরা ৭০ জন রোগীই হেপাটাইটিস জনিত রোগে ভূগছে। এর পরেই রয়েছে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস ও ফ্যাটি লিভারের অবস্থান। পাশাপাশি রয়েছে এলকোহল, মাঝে মাঝে অটোইমিউন হেপাটাইটিসের মত অখ্যাত রোগগুলোতে রয়েছেই। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে ভুগছেন, এমন শতকরা ৫ জন লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত। আর হেপাটাইটিস সি ভাইরাস ও ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটি যথাক্রমে ২০ ও ৩০ জন। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের এ রোগে আক্রান্ত হবার আশংকা বেশি। তবে চিকিৎসা করতে গিয়ে আমরা শিশুদের মধ্যেও হেপাটাইটিস বি জনিত লিভার ক্যান্সার খুঁজে পাই।
লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ : যে কোনো বয়সের মানুষই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের ৪ থেকে ৬ গুণ বেশি। সাধারণত: ক্যান্সার হবার আগে লিভার সিরোসিস দেখা দেয়। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্তরা প্রায়ই পেটের ডান পাশে উপরের দিকে অথবা বুকের ঠিক নিচে মাঝ বরাবর ব্যথা অনুভব করেন। যার তীব্রতা রোগীভেদে বিভিন্ন রকম। সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, পেট ফাঁপা, ওজন কমে যাওয়ার সাথে হালকা জ্বর জ্বরভাব এরোগের অন্যতম লক্ষণ। লিভার ক্যান্সার রোগীদের প্রায়ই জন্ডিস থাকে না, থাকলেও তা খুব অল্প। খাওয়ার অরুচি, অতিরিক্ত গ্যাস কিংবা কষা পায়খানার কমপেস্নন থাকতে পারে। আবার কখনো দেখা দেয় ডায়রিয়া। পেটে পানি থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে।
লিভ্যার ক্যান্সার নির্ণয় : লিভার ক্যান্সার নির্ণয়ের সহজ উপায় হচ্ছে একটি নির্ভরযোগ্য আল্ট্রাসনোগ্রাম। তবে কখনো কখনো সিটি স্ক্যানেরও প্রয়োজন হতে পারে। রক্তের অঋচ পরীক্ষাটি লিভার ক্যান্সারের একটি মোটামুটি নির্ভরযোগ্য টিউমার মার্কার। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত যে কোনো মানুষেরই উচিৎ প্রতি ৬ মাসে একবার এএফপি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করানো। তবে লিভার ক্যান্সারের ডায়াগনোসিস নিশ্চিত হতে হলে আল্ট্রাসনোগ্রাম গাইডেড এফএনএসি অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখতে হবে, অভিজ্ঞ হাতে করা এ পরীক্ষার সাফল্যের হারও প্রায় শতভাগ।
চিকিৎসা পদ্ধতি : লিভার ক্যান্সারের রোগীদের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হচ্ছে- কেমোথেরাপি, টিউমার অ্যাবলেশন, রিসেকশন ও লিভার প্রতিস্থাপন। ফাইভ ফ্লরোইউরাসিল, ডক্সেরুবিসিন আর টেমোক্সিফেনের মত কোমোথেরাপির ওষুধগুলো দীর্ঘদিন থেকে মন্দের ভালো হিসেবে লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহূত হয়ে আসছে। যদিও এদের কার্যকারিতা তেমন সুখকর নয়। বেশ ক’বছর থেকে বাজারে আছে কেপসসিটাবিন।
সম্প্রতি এ তালিকায় যোগ হয়েছে-সুরাফেনিব। এ ওষুধ দুটি মুখে খেতে হয় বিধায় রোগীকে হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন পড়ে না। এর পাশর্্বপ্রতিক্রিয়াও খুবই কম। আগের ওষুধের তুলনায় কার্যকারিতাও বেশি। তবে সমস্যা হচ্ছে-এ ওষুধগুলো বেশ দামী। পাশাপাশি সুরাফেনিব বাংলাদেশে খুব বেশি সহজলভ্যও নয়।
এছাড়াও লিভার ক্যান্সারের আশাব্যঞ্জক দু’টো চিকিৎসা পদ্ধতি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন ও পারকিউটেনিয়াস অ্যালকোহল ইঞ্জেকশন। এদুটো পদ্ধতির বেসিক একই। উভয় ক্ষেত্রেই ক্যান্সারকে দেহের বাইরে থেকে গাইডেড প্রবের মাধ্যমে পুড়িয়ে ছোট করে আনা হয়। এর মধ্যে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশনে আউটকাম পার কিউটেনিয়াস অ্যালকোহল ইঞ্জেকশনের তুলনায় সামান্য ভাল হলেও এর সীমাবদ্ধতা অনেকগুণ বেশি। প্রথমত এটি সাত থেকে আট গুণ বেশি দামী। দ্বিতীয়ত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশনের জন্য যেসব বিশেষায়িত যন্ত্রপাতির প্রয়োজন পড়ে, তা খুবই দামী এবং আমাদের দেশে দুর্লভ। টিউমারের সাইজ খুব বড় না হলে আর রোগীর শারীরিক অবস্থা সব মিলিয়ে ভাল থাকলে অপারেশন করে টিউমার ফেলে দেয়া খুবই কার্যকর। আর এজন্য প্রয়োজনীয় কুসা মেশিন, দক্ষ হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন আমাদের দেশে আছেন।
ব্লাড ক্যান্সার :-
রক্ত বা ব্লাড ক্যান্সার কথাটি শুনলেই আঁতকে ওঠেন সবাই, এই রোগের কারণ, উপসর্গ এবং রোগ নিরাময়যোগ্য কি না জানার আগ্রহ সবার।
ব্লাড ক্যান্সারের কারণ :
ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকিমিয়া রোগের সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, কিছু কিছু কারণ এই মরণব্যাধি উৎপত্তির জন্য দায়ী। যেমন জাপানে মহাযুদ্ধের সময় এটম বোমা বিস্ফোরণের পর সেখানে লোকদেরব্লাড ক্যান্সার মারাত্মকভাবে দেখা দেয়। গর্ভবতী মায়েদের যদি অতিরিক্ত এক্সরে করানো হয় তবে গর্ভস্খ সন্তানের ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যে সব কারখানায় বেনজিনের ব্যবহার বেশি হয় সেখানকার শ্রমিকদের ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি আছে। এনকালাইজিং স্পনডিলাইটিস রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেডিওথেরাপিতেও ব্লাড ক্যান্সার হতে পারে।
ব্লাড ক্যান্সারের উপসর্গ :
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা শরীরে সামান্য জ্বর, ওজন কমে যাওয়া ও দুর্বলতাবোধ করেন। ব্লাড ক্যান্সারকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, একিউট ও ক্রনিক। একিউট লিউকিমিয়া সাধারণত বাচ্চাদের এবং ক্রনিক লিউকিমিয়া বড়দের হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একিউট লিউকিমিয়া উপসর্গহীন থাকে এবং সাধারণ রক্তপরীক্ষা যেমন টিসি, ডিসি করার সময় ধরা পড়ে। মাইক্রোসকোপের নিচে এই রোগের কোষগুলো অভিজ্ঞ প্যাথলজিস্টেরচোখে ধরা পড়ে। ক্রনিক ক্ষেত্রে রোগীর যকৃৎ এবং প্লীহা বড় হয়।
চিকিৎসা :
কেমোথেরাপির মাধ্যমে ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়। অর্থাৎ ব্লাড ক্যান্সারের জন্য দায়ী কোষগুলো ধ্বংস করার জন্য অ্যান্টিক্যান্সার ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। রোগীকে অনেক পরীক্ষা করানোর পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যদি মনে করেন তাকে অ্যান্টিক্যান্সার চিকিৎসা দেয়া যাবে তবেই এই চিকিৎসা দেয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেরুরজ্জু প্রতিস্খাপন দ্বারাও এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। পরিশেষে বলতে চাই, সাধারণ রক্ত পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মাননিয়ন্ত্রণহীন ল্যাব অনেক সময় রক্ত পরীক্ষায় লিউকিমিয়া রোগ শনাক্ত না-ও করতে পারে। লিউকিময়েড রি-অ্যাকশন নামক রোগ যা সহজেই নিরাময়যোগ্য এর সাথে লিউকিমিয়া রোগের রক্ত পরীক্ষায় অনেক মিল আছে। কাজেই সাধারণ রক্ত পরীক্ষা যেমন টিসি, ডিসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পাকস্থলী ক্যান্সার :
পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ।
পাকস্থলী ক্যান্সারের কারন :
চর্বি ও অত্যাধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাবার পরিপাক তন্ত্রের ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
চর্বি ও অধিক চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহন খাদ্যে আঁশ, ভিটামিন এ.সি.ই সেলিনিয়াম ও জিংকের অভাব।
প্রতিরোধ :
চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পাশাপাশি আঁশ জাতীয় খাবার যেমন ফলমূল ও শাকসবজি বেশি খাওয়া উচিত।
মলদারে ক্যান্সার :
মলদারের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ।
রেকটাম ক্যান্সার কেন হয়?
ধনী লোকদের এ রোগ বেশি হয়। মদ্যপান ও ধূমপান এর সম্ভাবনা বাড়ায়। খাবারে যথেষ্ট আঁশ জাতীয় উপাদান থাকলে, যেমন সবজি, ফলমূল এ রোগের সম্ভাবনা কমায়। ৪০ বছর বয়সের পর এই সম্ভাবনা বাড়তে থাকে।
কটাম বা মলাশয় ক্যান্সার হলে প্রচলিত অপারেশন হচ্ছে রেকটাম বা মলাশয় ও মলদ্বার কেটে ফেলে পেটে Colostomy বা কৃত্রিম মলদ্বার বানিয়ে সেখানে ব্যাগ লাগিয়ে দেয়া, যার মধ্যে সব সময় মল জমা হবে এবং রোগী মাঝে মধ্যে এটি পরিষ্কার করে নেবেন। তার স্বাভাবিক মলদ্বার থাকবে না এবং সারা জীবন ওই পথে আর পায়খানা হবে না। কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফলে এখন স্বাভাবিক মলদ্বার রেখেই ক্যান্সারটি অপসারণ করা যায়। রোগী স্বাভাবিক পথেই পায়খানা করতে পারবেন। এ প্রযুক্তির ফলে ৭০-৮০% রেকটাম ক্যান্সার রোগী উপকৃত হবেন।
লক্ষণ কী?
মলদ্বারের দৈর্ঘ্য ৪ সেমি। মলদ্বারের ওপরের ১২ সেমি অংশের নাম রেকটাম। মলদ্বারে রক্ত যাওয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ। এ লক্ষণটিকে রোগীরা আমল দেন না। রোগী যদি এই রক্ত যাওয়ার কারণ ডাক্তার দিয়ে পুরোপুরি তদন্ত না করেই সিদ্ধান্ত নেন, এটি পাইলস থেকে হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিপদটি তখনই ঘটে। এরপর মাসের পর মাস কেটে যায় পাইলস মনে করে। ইত্যবসরে ক্যান্সার তার ডালপালা বিস্তার করতে থাকে। পেটে ব্যথা হতে থাকে, মল আটকে গিয়ে পেট ফুলে উঠতে পারে। তখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে বিশেষ ধরনের পরীক্ষায় এ রোগ ধরা পড়ে। ততক্ষণে এ রোগটি সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
প্রথম দিকে রোগীর মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন আসে। মলত্যাগের বেগ হলে রোগী টয়লেটে যান এবং শুধু রক্ত ও মিউকাস যেতে দেখেন। এটি সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথে হয়। রোগীরা এটিকে রক্ত আমাশয় বলে ধারণা করেন। ক্যান্সার যখন মলদ্বারের দিকে সম্প্রসারিত হয় তখন মলত্যাগের পর ব্যথা শুরু হয়ে দীর্ঘক্ষণ চলতে পারে। রোগীদের যখন বলা হয় আপনাকে বিশেষ ধরনের পরীক্ষা করে দেখতে হবে, কোনো ক্যান্সার আছে কি না। তখন তারা বলেন, স্যার আমি জানি এটি পাইলস। অনেক বছর ধরে চলছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে যে এখানে ক্যান্সার শুরু হতে পারে তা তারা খতিয়ে দেখতে চান না। সবচেয়ে অসুবিধা হলো পাইলস, ক্যান্সার, এনালফিশার সব রোগে রক্ত যাওয়াই প্রধান লক্ষণ। আসলে কোন রোগটি হয়েছে তা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে একজন অভিজ্ঞ সার্জনই কেবল বলতে পারেন। এই ক্যান্সার যদি মূত্রথলি অথবা মূত্রনালী আক্রমণ করে তখন রোগী প্রস্রাবের কষ্টে ভোগেন এবং বারবার প্রস্রাব হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার যৌনপথে ছড়িয়ে পড়ার কারণে ওই পথ দিয়ে রক্ত ও মিউকাস এমনকি মলও বেরিয়ে আসতে পারে।
বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা
মলের সুপ্ত রক্ত পরীক্ষা, মলদ্বারের ভেতর আঙুল দিয়ে পরীক্ষা, প্রকটসিগময়ডোস্কপি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কোলোনস্কপি, বেরিয়াম এনেমা, সি-ই-এ (কার্সিনো এম্রাইওনিক এন্টিজেন), আল্ট্রাসনোগ্রাম অব লিভার, আইভিইউ এক্স-রে, পেটের সিটি স্ক্যান
প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা
অপারেশনই এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা। এ রোগে ঐতিহ্যবাহী অপারেশন হচ্ছে রেকটাম বা মলাশয় ও মলদ্বার কেটে ফেলে পেটে নাভীর বাম দিকে কলোস্টমি বা কৃত্রিম মলদ্বার তৈরি করে দেয়া। যেখানে একটি ব্যাগ লাগানো থাকে, যার ভেতর মল জমা হতে থাকে। যখন রোগীকে এ জাতীয় অপারেশনের ধারণা দেয়া হয় তখন অনেক রোগীই বলেন, স্যার মরে যাব তবুও এমন অপারেশন করাব না। এসব রোগী এরপর হাতুড়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন অপারেশন ছাড়াই চিকিৎসার জন্য। কিছু দিন চিকিৎসার পর হতাশ হয়ে যখন ফিরে আসেন তখন সম্পূর্ণরূপে সারিয়ে তোলার অবস্থা আর থাকে না। তখন রোগী মিনতি করে বলেন, স্যার ভুল হয়ে গেছে এখন কিছু একটা করুন।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন আমরা ৭০-৮০% রেকটাম ক্যান্সার রোগীর মলদ্বার না কেটেই অপারেশন করতে পারি। যার ফলে স্বাভাবিক পথেই পায়খানা করতে পারবেন। এ প্রযুক্তিটির নাম হচ্ছে Stapling Technique (Disposable Circular Stapler, Proximate ILS, Proximate Linear Stapler I Roticulator)। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ আমি দেশের ঐতিহ্যবাহী হাসপাতাল হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে এ রকম একটি জটিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সফল অপারেশন করেছি। অপারেশনটি করতে আমাকে আমন্ত্রণ জানান দেশের প্রখ্যাত সার্জন ও আমাদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব ডা. জিয়াউল হক। রোগীর বয়স ৫০। বাংলাদেশ বিমানের অফিসার। অনেক দিন মলদ্বারে রক্ত যাচ্ছিল। হঠাৎ পেট ফুলে যাওয়ায় তাকে জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করে এই ক্যান্সারটি শনাক্ত করেন ডা. জিয়াউল হক। এ অপারেশনের জন্য একবার ব্যবহারযোগ্য দু’টি যন্ত্র আমরা সিঙ্গাপুর থেকে এনেছিলাম আগেভাগেই। যন্ত্রটি কিছুটা ব্যয়বহুল। অপারেশনের সময় আমরা বৃহদান্ত্র ও রেকটামের নির্ধারিত অংশটুকু কেটে ফেলে এই যন্ত্রের সাহায্যে বৃহদান্ত্র ও রেকটামের অবশিষ্টাংশ সংযুক্ত করে দিই। তলপেটের গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে এই যন্ত্র ছাড়া এ জাতীয় অপারেশন করা প্রায় অসম্ভব। বিগত নয় বছর আমরা এ জাতীয় অত্যাধুনিক অপারেশন অনেক করেছি। এ অপারেশনের পর সাধারণত পেটে অস্থায়ী ভিত্তিতে দু-তিন মাসের জন্য একটি ব্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়। তিন মাস পর ওই ব্যাগটি (কলোস্টমি বা আইলিওস্টমি) আবার অপারেশন করে বন্ধ করে দিতে হয়। তখন রোগী স্বাভাবিক মলদ্বার দিয়ে মলত্যাগ করতে পারেন। যখন রেকটামের ক্যান্সার খুবই গভীর থাকে তখন হাত দিয়ে সেলাই করে খাদ্যনালী জোড়া লাগানো যায় বলে এই যন্ত্র ব্যবহার প্রয়োজন হয় না।
হাড়ে ক্যান্সার :
সব রকম হাড় ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ।
হাড় ক্যান্সারের কারণ কি?
হাড় ক্যান্সারের সম্ভাবনা এখনও সম্পূর্ণভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় নি। হাড়ের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি এবং দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ফলে ক্যান্সার হতে পারে বলে মনে করা হয়। হাড়ের বৃদ্ধি উপর ইতিমধ্যে, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ উদ্দীপনা, জেনেটিক ফ্যাক্টর, বিশেষ ভাইরাল সংক্রমণ, রক্ত রিসার্কুলেশন অবরুদ্ধ হাড় বা তেজস্ক্রিয় রশ্মি উদ্ভাস হাড় ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকতে পারে।
হাড় ক্যান্সার লক্ষণগুলো কি কি?
* হাড় ক্যান্সার রোগীদের হাড়ের পৃষ্ঠে একটি শক্ত দলা উত্থান হতে পারে, ব্যথা অনুভব হতে পারে।
* হাড় ক্যান্সার রোগীদের হাড়ের ফাটল বা অঙ্গবিকৃতি থেকে ভুগতে হতে পারে।
* হাড় ক্যান্সার রোগীদের জ্বর বা ওজন হ্রাস, অবসাদ, চালিক শক্তি বা কার্যকলাপ হ্রাস হয়।
* হাড় ক্যান্সার রোগীদের একটানা বা অ – ব্যাখ্যামূলক পিঠ ব্যাথা থেকে ভুগতে হতে পারে।
* হাড় ক্যান্সার রোগীদের কোন সুস্পষ্ট কারণ ছাড়া বা একাধিক ফাটল থেকে ভুগতে হতে পারে।
* এই ক্যান্সার রোগীদের পায়ে অচেতন অনুভূতি হতে পারে।
* হাড় ক্যান্সার রোগী ব্যথা অনুভব অথবা হাড় বা জোড়ায় ফোলা, রাতে ব্যথা অনুভব এবং খারাপ এবং একটানা ঢিমে ব্যথা বা অস্থায়ী ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
আমাদের ডাক্তাররা মনে করেনঃ পরিবারের সদস্যদের হাড় ক্যান্সার রোগীদের আরো যত্ন দিলে এবং তাদের মানসিকভাবে সাহায্য করলে তা তাদের আস্থা বাড়াতে সাহায্য করে।