ডায়বেটিক নারীদের মা হওয়ার প্রস্তুতি
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রজননক্ষম রোগীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক হচ্ছেন নারী। গর্ভকালীন ২ থেকে ৫ শতাংশ নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। এঁদের মধ্যে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ মা গর্ভজনিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন এবং ১২ দশমিক ৫ শতাংশ মা গর্ভধারণের আগে থেকেই ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন।
যেসব ডায়াবেটিক নারী সন্তান ধারণ করতে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত সতর্কতা ও সঠিক পূর্বপ্রস্তুতি। কেননা, ডায়াবেটিসজনিত বিভিন্ন জটিলতা যেমন রেটিনা-কিডনি-স্নায়ু-রক্তনালির রোগ গর্ভকালীন জটিলতর হতে পারে। যাঁদের শর্করা নিয়ন্ত্রিত নয়, তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন গর্ভকালীন জটিলতার ঝুঁকি বেশি। যেমন: গর্ভপাত, প্রি-একলাম্পসিয়া, মেয়াদের আগেই প্রসব ইত্যাদি। মায়ের রক্তে উচ্চ শর্করা গর্ভের শিশুর বিভিন্ন ক্ষতি ঘটাতে পারে, যেমন: গর্ভে মৃত্যু, বিকলাঙ্গতা, স্থূলতা, প্রসবকালীন বিভিন্ন আঘাত ইত্যাদি।ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীর গর্ভধারণের প্রস্তুতি কমপক্ষে তিন মাস আগে শুরু করা জরুরি।
মানসিক প্রস্তুতি:
সন্তান ধারণের পরিকল্পনার সময়ই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রত্যেক মা এবং তাঁর পরিবারের সবার বিস্তারিত ও সঠিকভাবে জেনে নেওয়া উচিত যে কীভাবে ডায়াবেটিস ও গর্ভধারণ একে অপরকে প্রভাবিত করে, কী কী জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে এবং তা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায় কী।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস:
সন্তান ধারণের আগে থেকেই শর্করা নিয়ন্ত্রণে সুষম কিন্তু পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের সাহায্য নিন। গর্ভধারণ পরিকল্পনা শুরু থেকে গর্ভকালীন ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ মিলিগ্রাম ফলিত অ্যাসিড ট্যাবলেট সেবন করুন, যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা প্রতিরোধে উপকারী। রক্তশূন্যতা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সঠিক ওজন:
গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা এড়াতে সঠিক ওজনে আসুন। যাঁদের বিএমআই ২৭ বা তার বেশি, তাঁদের ওজন কমানো জরুরি।
শর্করা নিয়ন্ত্রণ:
বাড়িতে নিয়মিত খাওয়ার আগে ও দুই ঘণ্টা পর রক্তের শর্করা মাপুন এবং এগুলো যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫ এবং ৮ দশমিক ৫-এর নিচে রাখুন। গড় এইচবিএ১সি ৬ দশমিক ৫-এর নিচে অর্জন করুন। শর্করার সঠিক মাত্রা অর্জন করতে গর্ভধারণের তিন মাস আগে থেকে মুখে খাওয়ার ওষুধ পরিবর্তন করে ইনসুলিন ব্যবহার শুরু করুন।
আনুষঙ্গিক ওষুধ:
যাঁরা উচ্চরক্তচাপের জন্য থায়াজিড এআরবি-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করছেন, তাঁরা গর্ভধারণের আগেই এগুলো পাল্টে নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্য ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।গর্ভধারণের সময় রক্তে চর্বি বা কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খাওয়া যাবে না।
ডায়াবেটিসজনিত বিভিন্ন জটিলতা:
গর্ভধারণের আগে ডায়াবেটিসজনিত রেটিনার জটিলতা, কিডনি জটিলতা, বিভিন্ন রক্তনালির রোগ আছে কি না, তা শনাক্ত করে প্রয়োজনে চিকিৎসা নিন। কেননা, গর্ভকালীন এসব বেড়ে যেতে পারে। ধূমপান বা অ্যালকহল অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ:
কিডনির জটিলতা অর্থাৎ রক্তে ক্রিয়েটিনিন ২ মিলিগ্রাম বা তার বেশি, সিসিআর ৪৫ মিলি/মিনিট-এর কম, প্রস্রাবে আমিষের পরিমাণ দিনে ২ গ্রাম বা তার বেশি, রেটিনা জটিলতার সর্বোচ্চ ধাপ, রক্তনালিজনিত হূদেরাগ, এইচবিএ১সি ১০ শতাংশ বা তার বেশি—এই সব ক্ষেত্রে গর্ভধারণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে ও পরামর্শ নিতে কল করুন – 01716 606355
ডায়াবেটিস রোগ কি ?
দীর্ঘ স্থায়ীভাবে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী হওয়ার অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে। ইহা পারির্পাশ্বিক, বংশগত বা উভয়ের প্রভাবে সৃষ্টি হয়। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশী হলে তা প্রস্রাবের সাথে বের হতে থাকে। ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা জানার জন্য তাই রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হয়।
বংশ প্রভাব, মেদাধিক্য, সংক্রামক রোগ ইত্যাদি কারনে ও মানসিক চিন্তাভাবনায় এ রোগের লনাদির প্রথম প্রকাশ ঘটে থাকে।
ডায়াবেটিস হলে মিষ্টি জাতীয় খাবার-শর্করা, সঠিকভাবে দেহের কাজে লাগে না। পরে আমিষ ও চর্বি বিপাকে গোলযোগ ঘটে। ইনসুলিনের অভাবেই এ রকম হয়ে থাকে। ইনসুলিন এক প্রকার জৈব রস। ইহা রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ইনসুলিনের অভাবে দেহে শর্করা, আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাদ্যের বিপাক সঠিকভাবে হয় না, তাই ডায়াবেটিসকে বিপাক জনিত রোগ বলা হয়।
ডায়াবেটিস থেকে নানা ধরণের ব্যাধি হতে পারে। এর মধ্যে হৃদরোগ, চক্ষু, স্নায়ু, চর্ম, রক্তবাহী শিরা ও উপশিরা এবং মুত্রগ্রন্থির রোগই প্রধান।
ডায়াবেটিস ছোঁয়াছে বা সংক্রামক রোগ নয় বেশি মিষ্টি খেলেই ডায়াবেটিস হয় না।
১. ইনসুলিন কি ?
ইনসুলিন এক প্রকার হরমোন বা জৈব রস। ইহা অগ্নাশয় নামক গ্রন্থি থেকে বের হয়ে সোজাসুজি রক্তে মিশে যায়।
অগ্নাশয় পাকস্থলীর নীচে পিছন দিকে অবস্থিত। ইনসুলিন রক্তে শর্করাকে জীবকোষে প্রবেশ ও কার্যকরী করতে সাহায্য করে। শর্করাকে দেহের কাজে লাগাতে পারলে আমরা শক্তি পেয়ে থাকি।
যাদের ডায়াবেটিস হয়নি তারা প্রয়োজন মতো কার্যকরী ইনসুলিন পেয়ে থাকেন। তাই তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে- বাড়তে পারে না। কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস হয়েছে তারা পরিমাণ মতো কার্যকরী ইনসুলিন পান না বলেই তাদের রক্তের শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।
অগ্নাশয়ের বিটা কোষগুলিতে ইনসুলিন তৈরী হয়। কাজেই এ কোষগুলির কর্মমতার উপর ইনসুীলন রস নিঃসরণের পরিমাণ নির্ভর করে। কোষগুলির কর্মমতার অভাব হলে বা নিঃসৃত ইনসুলিনের কার্যকারিতা ব্যাহত হলে (থাইরয়েড হরমোন, কর্টিসন, গ্লকাগন ইত্যাদি ইনসুলিনের কাজ ব্যাহত করে) শরীরের জীবকোষ খাদ্য থেকে পাওয়া শর্করা কাজে লাগাতে পারে না।
শর্করা শরীরের জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ইনসুলিনের অভাবে শর্করা কাজে লাগাতে না পেরে দেহ চর্বি ও আমিষ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে। এর ফলে শরীরের ওজন কমতে থাকে, কান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয় এবং ডায়াবেটিস রোগের অন্যান্য লণ আরও বেশী করে প্রকাশ পায়।
২. ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণ সমূহ :
ডায়াবেটিস হলে সাধারণতঃ কতগুলি লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রধান প্রধান লক্ষণগুলি হল :
অত্যধিক প্রস্রাব
অত্যাধিক পিপাসা
অতিরিক্ত ক্ষুধা
নানা ধরণের চর্মরোগ
অত্যাধিক দুর্বলতা ও কান্তি
চোখে ঝাপসা দেখা
শরীরের ওজন হ্রাস
ঘা শুকাতে বিলম্ব
অল্প বয়স্কদের মধ্যে এই রোগলক্ষণগুলো তীরভাবে দেখা দেয়। বয়স্কদের বেলায় কোন লণ ছাড়াই এ রোগ দেখা দিতে পারে। অনেক বয়স্ক রোগীর লক্ষণগুলি প্রথম অবস্থায় খুব মৃদু থাকে। কোন জ্বালা যন্ত্রণা থাকে না।। তাই অনেকে এগুলির প্রতি বিশেষ নজর দেন না। রোগের চিকিৎসা না হবার ফলে রক্তে চিনি অনেক বেড়ে যায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই রোগ ধরা পড়া মাত্রই রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা হওয়া উচিত।
৩. কাদের বেশী ডায়াবেটিস হয় :
ক) যাদের বংশে ডায়াবেটিস আছে
খ) মেদবহুল বা স্থূলকায় ব্যক্তির
গ) মাঝারি ও বয়স্ক লোকের
ঘ) যারা শরীর চর্চা করেন না
ঙ) মামস, ককসাসাকি ও ইনফেকশাস মননিউকিওসিস ভাইরাসে আক্রান্ত হলে
চ) অনেক দিন যাবৎ করটিসোন জাতীয় ঔষধ সেবন করলে
ছ) অপুষ্টি বা হিমোক্রমটসিস হয়ে থাকলে
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির তালিকাভুক্ত ৪৫২১৬ (এপ্রিল ’৮৫ পর্যন্ত) রোগীর মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের রোগীর শতকরা হার নিম্নরূপ :
ক) যাদের বংশে ডায়াবেটিস ছিল বা জন্মসূত্রে ৪২.৭৩
খ) কম বয়স্ক (০-৪০ বৎসর) ব্যক্তিদের ৩০.০০
গ) মাঝারি বয়স্ক (৪১-৫০) ব্যক্তিদের ৩২.৮৪
ঘ) বয়স্ক (৫১ + বৎসর) ব্যক্তিদের ৩৭.১৬
ঙ) স্থূলকায় ব্যক্তিদের ১৭.০২
যে সব অবস্থায় ডায়াবেটিস বেশী হয় :
বাঞ্চিত ওজনের চেয়ে (১০% বা তার অধিক) ওজন বেশী হলে
অত্যধিক চিন্তা ভাবনায়
গর্ভাবস্থায়
শারীরিক পরিশ্রম না করলে
আঘাত পেলে
সংক্রামক রোগে
অসম খাবার (Unbalanced food) খেলে
অস্ত্রেপচার হলে
এসব অবস্থা রোগ বাড়াতেও সাহায্য করে। এগুলির প্রতি দৃষ্টি রেখে প্রথম থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেিল কোন কোন ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করা সব।
ডায়াবেটিসের শ্রেণী বিভাগ :
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস সম্বন্ধে ১৯৮০ সালের দক্ষ কমিটির ৬৪৬ নম্বর রিপোর্টে নিম্নলিখিত শ্রেণী বিভাগ দেখান হয়েছে :
ক) কিনিক্যাল শ্রেণী বিভাগ :
ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস
১। ইনসুলিন নির্ভরশীল (Insulin deoendent) টাইপ-১
২। ইনসুলিন নিরপে (Non Insulin deoendent) টাইপ-২
ক) অস্থূলকায় ব্যক্তি
খ) স্থলূকায় ব্যক্তি
অপুষ্টি সম্পর্কিত (Malnutrition related diabetes mellitus সংক্ষেপে MRDM)
অন্যান্য প্রকার :
বিভিন্ন কারণ ও উপসর্গ সহযোগে ডায়াবেটিস-
(১) অগ্নাশয়ের ব্যাধি,
(২) হরমোনজনিত কারণ,
(৩) ঔষধ বা রাসায়নিক দ্রব্য সেবন জনিত কারণ,
(৪) ইনসুলিন গ্রহণকারী যন্ত্রের অস্বাভাবিক অবস্থা,
(৫) কোন কোন জিন (—) সংক্রান্ত অবস্থা,
(৬) বিবিধ।
শর্করা সহ্যগুণের দুর্বলতা (—-)
ক) অস্থূলকায় ব্যক্তির
খ) স্থলকায় ব্যক্তির
গ) অন্যান্য অবস্থা ও উপসর্গের সাথে শর্করা সহ্যগুনের দুর্বলতা
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস
খ) ডায়াবেটিস সম্ভাবনাময় শ্রেণী
(যাদের শর্করা সহ্যগুন নিয়মিত কিন্তু ডায়াবেটিস হতে পারে এ সম্ভাবনা আছে)
পূর্বে যাদের শর্করা সহ্যগুণ অস্বাভাবিক ছিল। যাদের শর্করা সহ্যগুণ অস্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ইনসুলিন নির্ভরশীল ও ইনসুলিন নিরপে এ দু’প্রকারের ডায়াবেটিসই প্রধান। ইনসুলিন নির্ভলশীল রোগীদের ইনসুলিনের অভাবের জন্য ইনসুলিন ইনজেকশনের প্রয়োজন হয়। সব বয়সের লোকেরই ইনসুলিন ইনজেকশনের দরকার হতে পারে, তবে অল্প বয়স্ক অনেক রোগীকেই ইনসুলিন নিতে হয়।
ইনসুলিন নিরপে রোগীদের শরীরে কিছুটা ইনসুলিন থাকে। তবে চাহিদার প্রয়োজনে তা যথেষ্ট নয় অথবা প্রাপ্ত ইনসুলিন শরীর ব্যবহার করতে পারে না। এ শ্রেণীর রোগীদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। প্রয়োজন বোধে কোন কোন ক্ষেত্রে শর্করা কমানোর বড়ি (—) সেবন করতে হয়। বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির তালিকাভুক্ত রোগীর মধ্যে শতকরা ২০ জনের ইনসুলিন দরকার হয়।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে বিপদ :
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে কয়েক বৎসরের মধ্যে নানা জটিল উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বিশেষভাবে শিরা, স্নায়ু, চক্ষু ও মুত্রগ্রন্থি ইত্যাদির অসুখই প্রধান।
ডায়াবেটিসের জন্য যে সব পীড়া হয়ে থাকে :
শিরা উপশিরা সম্বন্ধীয় রোগ : (Vascular Disease)
রক্তবাহী শিরা সম্বন্ধীয় : পক্ষাঘাত
(Macroangiopathy) : হৃদরোগ
পায়ের পেশীতে খিল
পায়ে পচনশীলতা
রক্তবাহী উপশিরা সম্বন্ধীয় : চক্ষুরোগ
মূত্রগ্রন্থির রোগ : মুত্রগ্রন্থির প্রদাহ ও ব্যাধি
(Nephropathy) : বেদনা, শিহরণ, যন্ত্রণা ইত্যাদি
পাতলা পায়খানা-খাবার পরে ও রাত্রে
চক্ষুরোগ : ছানি :
দৃষ্টি শক্তি হ্রাস ও অন্ধত্ব (Retinopathy) গ্লুকোমার ও চোখে বেদনা
ফুসফুসের রোগ : যক্ষ্মা
মুখের রোগ : মাড়ির প্রদাহ পেরিওডেনটাল ডিজিজ
পাইওরিয়া
গিরা (Joint) রোগ : গোড়ালির অস্থিরতায়
পেশী পীড়া : উরুর পেশীর পীড়া ও দুর্বলতা (—)
চর্মরোগ (Skin Disease) : চুলকানি, ফোড়া ও পাঁচড়া
এ সব ছাড়া পুরুষদের যৌন মতা কমে যায়। মহিলাদের ক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত অসুবিধাগুলি দেখা দিতে পারে।
বেশী ওজনের শিশুর জন্ম
মৃত শিশুর জন্য
অকালে সন্তান প্রসব
শিশুর জন্মের পরেই মৃত্যু
নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করলে জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়া বা জটিলতা বিলম্বিত করা যায় :
ক) রোগ নিয়ন্ত্রণের সুব্যবস্থা ও নিয়মিত চিকিৎসা
খ) শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখা
গ) রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা
ঘ) ঘুমপান থেকে বিরত থাকা
ঙ) নিয়মিতভাবে পরিমিত ব্যায়াম করা
কি করে ডায়বেটিস দমন করা যায় :
আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সময় মত গ্রহণ করে ডায়বেটিস দমিয়ে রাখা যায়। রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে রোগীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থা প্রায় স্বাভাবিক থাকবে এবং তিনি কর্মঠ, সুখী ও সমাজ হিতকর জীবন-যাপন করতে পারবেন।
রোগ সুস্থ বোধ করবেন
রোগীর লক্ষণগুলি থাকবে না
রক্তের শর্কবার পরিমাণ স্বাভাবিক ববা তার কাছাকাছি থাকবে
প্রস্রাব শর্করা মুক্ত থাকবে
সুনিয়ন্ত্রিত ও সুষম খাদ্যে শরীরের ওজন ঠিক থাকবে
কোন জটিলতার লক্ষণ দেখা দেবে না।
রোগ দমন করতে হলে রোগীকে :
রোগ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করতে হবে
চিকিৎসকদের পরামর্শ ও নির্দেশ মেনে চলতে হবে
নিয়ম ও শৃংখলা মেনে চলতে হবে
রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা বিষয়ে (খাদ্য, ঔষধ ও ব্যায়াম)
প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করে প্রকৃত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
শৃংখলার সাথে চলতে হবে
রোগীকে মনে রাখতে হবে-শৃংক্ষলতাই জীবন
ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা :
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের প্রধান ব্যবস্থাগুলি হচ্ছে-খাদ্য নিয়ন্ত্রণ (diet/food control ) ঔষধ (drug) এবং ব্যায়াম (exercise)।
বর্তমানে শিাকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকারী পদপে বলে গণ্য করা হচ্ছে। কারণ, শিা ছাড়া খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ঔষধ ও ব্যায়াম এগুলি যথাযথভাবে পালিত হয় না, ফলে রোগও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না। এ রোগের চিকিৎসায় রোগীর আর্থিক, সামাজিক, মানসিক ও শিাগত অবস্থার প্রতি ল্য রাখা খুবই দরকার।
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ (diet/food control )
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যের ভূমিকা খুবই গুরত্বপূর্ণ। খাদ্যের গুণগত মানের দিকে দৃষ্টি রেখে পরিমান মতো খাদ্য গ্রহণই রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রথম ও প্রধান উপায়।
মাঝারী বয়স্ক ও বয়স্ক রোগীদের অনেকেরই শরীরে বেশ কিছু পরিমাণ ইনসুলিন তৈরী হয়। সব রকম খবার অবাধে খাওয়ার জন্য এ পরিমাণ ইনসুলিন যথেষ্ঠ নয়। কিন্তু রোগীর কাজকর্ম ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে খাদ্যের পরিমান নির্ধারণ করলে এ ইনসুলিনই যথেষ্ট হতে পারে। কাজেই রোগীর প্রয়োজনের দিকে ল্য রেখে যদি খাদ্য গ্রহণ করা হয় এবং বাড়তি ওজন কমান যায়, তা হলে সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
আমাদের শরীরের তাপ, কর্মশক্তি, ক্ষয়পূরণ সব কিছুই খাদ্যের দ্বারা নিরূপিত হয়। খাদ্যে শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ও লবণ প্রভূতি থাকতে হয়। শরীর, সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টিমান বিচার করে, খাদ্য গ্রহণ করা দরকার। খাদ্য গ্রহণের সময় এ দিকে অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে।
রোগীর খাদ্যের পরিমাণ :
একজন রোগীর খাদ্যের পরিমান তার বয়স,ওজন ও কাজকর্মের তারতম্যের উপর নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞগণ এ সবের ভিত্তিতে একজন রোগীর জন্য ১০০ থেকে ৩০০ গ্রাম শর্করা (প্রয়োজন আরও বেশী), ৫০ থেকে ১২৫ গ্রাম চর্বি ও ৬০ থেকে ১০০ গ্রাম আমিষ জাতীয় খাদ্য (দেহের বাঞ্চিত ওজনের বাড়তি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ১ গ্রাম আমিষ যথেষ্ট) গ্রহণের সুপারিশ করেছেন। বাড়ন্ত বয়সের ছেলে মেয়েদের জন্য প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ২ থেকে ৪গ্রাম আমিষ দরকার হয়।(৩০ গ্রামে ১ আউন্স এক ছটাক)
খাদ্য শক্তি :
আমরা খাদ্য থেকে শক্তি পাই। এ শক্তির একককেই ক্যালোরী(calorie) বলে। রোগীর বয়স, ওজন ও কাজ কর্মের গুরুত্বের উপর ক্যালোরীর পরিমাণ নির্ভর করে।
শর্করা জাতীয় খাদ্য (চিনি, মিষ্টি ফল, শস্য, ডাল ও মূল জাতীয় খাদ্য এ শ্রেণীভুক্ত) শরীরে তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে। ১ গ্রাম শর্করা খেলে ৪ ক্যালোরী পাওয়া যায় ।
আমিষ জাতীয় খাদ্য (মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধজাত খাদ্য, বিভিন্ন প্রকারের ডাল) শরীর গঠন ও ক্ষয়পূরণ করে। ১ গ্রাম আমিষ খেলে ৪ ক্যালোরী পাওয় যায় ।
চর্বি জাতীয় খাদ্য (ঘি, মাখণ, বিভিন্ন প্রকারের তেল, বাদাম, চিনে বাদাম, নারকেল) দেহে তাপ ও শক্তি সৃষ্টি করে, দেহের মসৃণতা ও সৌন্দর্য বাড়ায় (১ গ্রাম চর্বি খেলে ৯.২ ক্যালোরী পাওয়া যায়)।
খাদ্য বিষয়ে কয়েকটি কথা মনে রাখা ভাল
ডাযাবেটিস রোগীদের জন্য পরিমান মত খাদ্য গ্রহণই রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রথম পদ পে। কোন খাদ্য কি পরিমাণ খেলে রোগী সুস্থ জীবন-যাপন করতে পারবেন, এটাই খাদ্য নির্বাচনের মুখ্য বিষয়।রোগীর বয়স, উচ্চতা, ওজন, দৈনন্দিন কাজকর্ম, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও নিজস্ব পছন্দ অপছন্দের উপর অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীর নিয়মিত খাবারের কিছু কিছু পরিবর্তন দরকার। পরিবারের সবাই একই খাদ্য খেতে পারেন, রোগী শুধুমাত্র চিনি জাতীয় খাদ্য বাদ দিয়ে খেলেই হয়।
পথ্য বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের বিনা অনুমতিতে খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করা যাবে না।
প্রত্যেকদিন নিয়মিত সময়ে প্রায় একই ওজনের খাদ্য খেতে হবে।কোন সময়ের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না।
কোন সময়ে কম খেলে পরে বেশী খাওয়া যাবে না।
চিনি, গুড়, মিছরী প্রভৃতি খাওয়া যাবে না।
সারা দিনে মোট খাদ্য তিন ভাগে ভাগ করতে হবে।
পাঁচ ভাগের এক ভাগ সকালে, দু’ভাগ দুপুরে ও দু’ভাগ রাত্রে খেতে হবে। বেলা ১১টা ও ৪টার দিকে সামান্য হালকা খাবার খাওয়া যাবে। অভ্যাস ও কাজের তারতম্য অনুসারে এ নিয়মের কিছুটা রদবদল হতে পারে।
যত বেশী রকমের খাদ্য খাওয়া যাবে ততই খাদ্য সুষম হবে।
ঔষধ (Drug)
চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নিবেন রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোন রোগীর জন্য নিম্নলিখিত কোন ব্যবস্থাটি সবচেয়ে ভালঃ-
ক) শুধুমাত্র খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম।
খ) খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম ও বডি (রক্তের শর্করা কমানোর বড়ি)।
গ) খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম ও ইনসুলিন ইনজেকশন।
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের পরও যদি রোগ না দমে তবে কি পরিমাণ ও কোন ঔষধের দরকার তা চিকিৎসক ঠিক করবেন। বড়িরোগীর অগ্নাশয় উত্তেজিত করে কিছু পরিমাণ ইনসুলিন নিঃসরণের ব্যবস্থা করে। এ ব্যবস্থা ততদিন নেওয়া চলে যতদিন বড়ি খাওয়ার ফলে রোগ দমন করা যায়। রোগী কোন বাড়ি কি পরিমাণে খাবেন তা চিকিৎসক ঠিক করে দিবেন। শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি যাদের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও বড়িতে রোগ নিয়ন্ত্রিত হয় না তাদের ইনসুলিন ইনজেকশন দিতেই হবে। অপারেশন ও প্রদাহ দমনের মত জরুরী অবস্থায় ইনজেকশন নিতে হতে পারে।
রোগীর অন্য প্রকারের কোন রোগ হলে তার চিকিৎসার সাথে ডায়াবেটিসের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।
ব্যায়াম (exereiac) :
স্বাভাবিক কাজকর্ম, চলাফেরা এবং ব্যায়াম ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অপরিহার্য। ব্যায়াম মাংসপেশী চাঙ্গা ও সবল করে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ঔষধ ব্যবহারের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। ব্যায়াম করলে শরীর ইনসুলিন আরও কার্যকরী হয় এবং রক্তে চিনির পরিমাণ কমে যায়। ব্যায়ামের ফলে শরীর থেকে অন্ততঃ ঘাম বের হতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সকালে ও বিকালে হাঁটা, সাঁতার কাটা জগিং (এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লাফান)( ও ওঠা-বসা করা ভাল ব্যায়াম। তবে ব্যায়ামের ধরণ রোগীর বয়স ও স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। অতিরিক্ত ব্যায়াম করা উচিত নয়।
৮. নিয়ম শৃঙ্খলা (Discipline)
Discipline is life -নিয়ম শৃঙ্খলাই জীবন। এ নিয়ম সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তা তিনি রোগীর হন বা সুস্থ থাকুন।
ডায়াবেটিস রোগীকে বেশ কিছু বিষয়ে নিযম মেনে চলতে হয়। চলাফেরায়, কার্জে-কর্মে, আহারে-বিহারে এক কথায় সবক্ষেত্রেই তাকে নিয়ম মাফিক চলতে হয়। নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলার মাত্রার উপরই রোগীর রোগ নিয়ন্ত্রণের পরিমাণ নির্ভর করে।
নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা, চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে রক্ত পরীক্ষা ও বাড়ীতে প্রস্রাব করা শৃঙ্খলার অংগ।
চিকিৎসক রোগীকে কি ব্যবস্থাপত্র দিবেন ?
রোগের প্রকার ব্যবস্থাপত্র
ইনসুলিন নির্ভরশীল প্রয়োজন মত ব্যায়াম, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ইনসুলিন
ইনসুলিন অনির্ভরশীল (ক) প্রয়োজন মত ব্যায়াম ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ।
(খ) প্রয়োজন মত ব্যায়াম, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও বড়ি।
প্রস্রাব পরীক্ষা :
প্রস্রাব পরীক্ষা করে অসুখের অবস্থা কি তা জানা যায়। আমরা ঘরেই প্রস্রাব রোগ ধরা পড়ার পর প্রথম দিকে প্রতিদিন সকালে নাস্তার আগে, নাস্তার আগে, নাস্তার দেড় থেকে দু’ঘন্টার মধ্যে, দুপুরে খাবার আগে ও খাবার দেড় থেকে দু’ঘন্টার মধ্যে এবং রাত্রে খাবার আগে প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হয়। প্রস্রাব শর্করামুক্ত হলে রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে বুঝতে হবে। রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে দিনে ৩ বার অর্থাৎ সকালে নাস্তার আধ ঘন্টা আগে, দুপুরে খাবার দেড় থেকে দু’ঘন্টার মধ্যে এবং রাত্রে খাবার আগে প্রসাব পরীক্ষা করলেই চলে।
প্রস্রাব শর্করামুক্ত না থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণতঃ তিনি-
রক্তের শর্করা পরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারেন
খাদ্য তালিকার পরিবর্তন করতে পারেন
ঔষধের পরিমাণ বদলাতে পারেন বা ভিন্ন ঔষধের ব্যবস্থা দিতে পারেন
ব্যায়াম করার ধরণ ও মাত্রা পরিবর্তনের উপদেশ দিতে পারেন
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ডায়াবেটিস সম্বন্ধে পুনঃ শিার ব্যবস্থা করতে পারেন
৯. মূত্র পরীক্ষার নিয়ম :
মূত্র পরীক্ষার ধাপ চারটি
১। সকালে বিছানা ত্যাগ করে প্রসাব করুন।
এ প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হবে না।
২। এক গ্লাস পানি পান করুন এবং পরে আবার প্রস্রাব করুন। প্রস্রাব পরীক্ষা করুন। প্রস্রাবে শর্করা আছে কিনা এবং থাকলে তার পরিমাণ কত তা এ পরীক্ষায় ধরা পড়বে।
৩। একটা টেষ্ট টিউবে চা চামচের এক চামচ বা ৫ এম এল বেনিডিকট সলিউশন নিয়ে তাতে ৮ ফোটা প্রস্রাব মেশান। একটু নাড়াচাড়া করুন এবং ভালভাবে ফুটিয়ে নিন। প্রস্রাবে শর্করা থাকলে রং এর পরিবর্তন হবে। প্রস্রাব শর্করা থাকলে রং এর পরিবর্তন হবে। প্রস্রাব শর্করামুক্ত থাকলে সলিউশনের রং এর কোন পরিবর্তন হবে না, রং নীল থাকবে।
শর্করা থাকলে রং নিম্নরূপ হতে পারে
রং শর্করার পরিমাণ শতকরা হার
সবুজ অতি সামান্য (+) ০.১
সবুজ হলুদ সামান্য (+ +) ০.২-০.৪
হলুদ বেশী (+ + +) ০.৫
কমলা আরও বেশী (+ + + +) ১.০০
লাল খুব বেশী (+ + + + +) ২.০০ বা তার উপর
প্রস্রাব কেমন করে পরীা করতে হয়
প্রস্রাব পরীার ঔষধ (বেনিডিক্ট সলিউশন), টেস্ট টিউব, ডপার, স্পিরিট ল্যাম্প, হোল্ডার।
এবার হোল্ডার দিয়ে টেস্ট টিউবটি শক্ত করে ধরে স্পিরিট ল্যাম্পে (বা অন্য যে কোন প্রকারের আগুনে) গরম করুন। প্রস্রাব মেশান। ঔষধ টগবগ করে কয়েকবার ফুটে উঠলে টেষ্টটিউব সরিয়ে নিন এবং রং কেমন হয়েছে দেখুন। — যদি নীল থাকে তবে বুঝতে হবে প্রস্রাব দিয়ে শর্করা বের হচ্ছে না-কিন্তু রং সবুজ বা অন্য কোন রকম হলে বুঝতে হবে প্রস্রাব দিয়ে শর্করা বের হচ্ছে। (প্রস্রাব পরীক্ষার অন্যান্য নিয়ম পরে বলা হয়েছে)।
জরুরী অবস্থা
জরুরী অবস্থাগুলোর মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তের শর্করা কমে যাওয়া) ও ডায়াবেটিক কমা এ দুটি অবস্থার জন্য ডায়াবেটিস রোগীকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া :
রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোর জন্য ইনসুলিন দেওয়া হয়। কিন্তু এ ইনজেকশনের ফলে যদি শর্করার পরিমাণ খুব কমে যায় অর্থাৎ রক্তে স্বাভাবিক ভাবে যে পরিমাণ শর্করা থাকার কথা তার চেয়েও অনেক কমে যায়, তাহলে প্রতিক্রিয়া হতে পারে। মনে রাখা ভাল মস্তিষ্কের প্রধান খাদ্য শর্করা এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ শর্করার অভাবে বিপদ ঘটে থাকে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ
অসুস্থ রোধ করা
অত্যাধিক ক্ষুধা লাগা
শরীরের ঘাম বের হওয়া
বুক ঘড়ফড় করা
শরীরে কাঁপুনি দেখা দেওয়া
চোখে ঝাপসা দেখা
শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা
অজ্ঞান হয়ে পড়া
কখন লক্ষণ দেখা দেয় , ইনসুলিনের পরিমাণ বেশী হলে বা রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোর বড়ি বেশী খেলে
খাবার খুব কম খেলে বা খেতে ভুলে গেলে ইনসুলিন নেওয়ার পর খুব দেরী করে খেলে বেশী ব্যায়াম করলে ।
লক্ষণ দেখা দিলে কি করা উচিত :
এই প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ দেখা মাত্রই রোগীকে চাম চামচের ৮ চামচ চিনি এক গ্লাস পানিতে গুলিতে খাইয়ে দিতে হয়। এতে তাড়াতাড়ি রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং প্রতিক্রিয়ার লক্ষণগুলি দূর হবে। তবে দশ মিনিটের মধ্যে লক্ষণগুলি দূর না হলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে অথবা রোগীকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
ডায়াবেটিক কমা (Diaebatics coma) :
যে সব রোগী ইনসুরিন নেন তাদেরই বেশী করে ডায়াটিক কমা হয়ে থাকে। অপর্যাপ্ত ইনসুলিন নিলে রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব বেড়ে শেষে এ বিপর্যয় নিয়ে আসে।
নিম্নলিখিত কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ অত্যাধিক বেড়ে যায়
ক) বেশী খাবার খেলে
খ) ব্যায়াম না করলে
গ) খুব কম ইনসুলিন নিলে
ঘ) বড়ি খেতে ভুলে গেলে
ঙ) সংক্রামক রোগ বা মানসিক বিপর্যয় হলে
চ) অন্য কোন রোগের চিকিৎসার সময় ডায়বেটিসের চিকিৎসা বন্ধ রাখলে
ইনসুলিনের অভাবে রক্তের শর্করা কাজে লাগাতে না পেরে দেহ জ্বালানীর জন্য চর্বি ব্যবহার করে। ঠিকভাবে চর্বি ব্যবহার না করার ফলে ‘এসিটোন’ (—-) নামক রাসায়নিক পদার্থ প্রস্রাবের সাথে বের হতে থাকে। ফলে আস্তে আস্তে রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং এ অবস্থাকেই ডায়াবেটিক কমা বলা হয়।
এ অবস্থায় লক্ষণগুলি হচ্ছে
প্রস্রাবে শর্করার পরিমাণ অত্যধিক বেশী (যেমন ইট লাল রং)
অত্যাধিক পিপাসা
ঘন ঘন প্রসাব
ভয়ানক ক্ষুধা
অত্যন্ত অসুস্থ বোধ করা
দুর্বল হয়ে পড়া
বমি বমি ভাব
ঝিমানো
শ্বাস কষ্ট
মাথা ধরা
ঝাপসা দেখা
নিস্তেজ হয়ে পড়া
স্বাসে এসিটোনের সুমিষ্ট গন্ধ পাওয়া
এ লক্ষণগুলি দেখা দিলে
অবিলম্বে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে
কিটোনের জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হবে
ইনসুলিনের বিছানায় শুইয়ে দিতে হবে
তাকে চা, কফি ইত্যাদি খেতে দিতে হবে
অসুস্থ হয়ে পড়লে ডায়াবেটিস রোগীরা অনেকেই ইনসুলিন নিতে অবহেলা করেন। এ সময় তারা কম খান কিন্তু যকৃত থেকে শর্করা বের হয়ে আসে বলে ইনসুলিনও কম কার্যকরী হয়, তাই অসুখের সময় কিছু বেশী ইনসুলিন প্রয়োগের দরকার হয়।
স্বাস্থ্য বিধি :
শরীর সুস্থ ও সবল রাখার জন্য সকলেরই স্বাস্থ্যবিধি পালন করা কর্তব্য। খাদ্য, পুষ্টি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিদ্রা ও বিশ্রাম, পরিমিত ব্যায়াম, নিয়মিত গোছল, প্রস্রাব পায়খানা এবং দাঁত, ত্বক ও পায়ের যত প্রভৃতি স্বাস্থ্য বিধির অবশ্য করণীয় বিষয়। এগুলি যথাযথ পালন করলে ডায়াবেটিসের অনেক জটিলতা থেকে রোগী মুক্ত থাকতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীর কর্তব্য :
পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা
প্রতিবার খাবার পরে এবং রাত্রে দাঁত মুখ পরিস্কার করা
নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা
সুষম খাদ্য পরিমিত পরিমাণ খাওয়া
নিষিদ্ধ খাদ্য না খাওয়া (চিনি, গুড় ও এসব নিয়ে তৈরী খাবার)
চিকিৎসক ও পথ্য বিশেষজ্ঞের উপদেশ মতো ব্যবস্থা নেওয়া
প্রস্রাব ও রক্ত নিয়মিত পরীা করা
ঘা, ক্ষত ও চুলকানি হলে সময় মত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া
স্বাভাবিক কাজকতর্ম করা-চুপ করে বসে না থাকা
বেশী চিন্তাভাবনা না করা
নিয়মিতভাবে পরিমিত পরিমাণ ব্যায়াম করা
প্রয়োজন মতো ঘুমান ও বিশ্রাম নেওয়া
মাঝে মাঝে ওজন পরীা করা
পায়ের যত্ন নেওয়া
পায়ের যত্নের প্রয়োজন কেন ?
সাধারণ ভাবে বয়স্ক লোকদের পায়ের রক্ত চলাচল কমে যায়
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে পায়ের রক্তবাহী শিরা গুলি শক্ত ও সরু হয়ে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়
কোন কোন ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তবাহী নালী বন্ধ হয়ে অনুভৃতি কমে যায়
এসব ছাড়াও ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে বা সুচিকিৎসা না হলে পায়ে সংক্রামক ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী থাকে। তাই পায়ের বিপদের জন্য সর্তক থাকতে হবে। পায়ের যত্ন মূলনীতি তিনটি-
পায়ে যেন কোন অসুবিধা না হয়
পায়ে যেন কোন আঘাত না লাগে বা কোন ত না হয়
নরম এবং পরতে আরাম লাগে এমন জুতা পরা ।
পায়ে সংক্রামক রোগ এড়াতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে :
পায়ের রং এর কোন পরিবর্তন নজরে এলে চিকিৎসককে তা তৎনাৎ জানাতে হবে।
অল্প গরম পানি দিয়ে প্রত্যেহ ভাল করে পা ধুতে
শুকনা তোয়ালে দিয়ে পা, বিশেষ করে দু’আঙ্গলের মাঝের জায়গা, আস্তে আস্তে মছে ফেলতে হবে
পা, পায়ের পাতা বা আঙ্গুলে যেন কোন প্রকার আঘাত না লাগে
নখ সোজাসুজি ভাবে কাটাতে হবে।নখ কাটাতে খুব ধারাল ছুরি বা ব্লেড ব্যবহার করা যাবে না।
পরতে আরাম লাগে এমন জুতা পরা উচিত
মোজা পরিষ্কার রাখতে হবে
যা করা ঠিক হবে নাঃ
খালি পায়ে হাটা
বেশী গরম পানি পায়ে ঢালা
পা, পায়ের পাতা বা আঙ্গুলে আঘাত লাগান বা ত হতে দেওয়া
আটশাট জুতা বা মোজা পরা
পায়ের বেদনা হলে বা ফুলে গেলে সময় মত চিকিৎসা না করা
পায়ের কড়া নিজে কাটা
রোজা করতে পারবেন নাঃ
যে সকল ডায়াবেটিকদের ইনসুলিন ছাড়া রোগ দমন করা যায় না
যাহাদের প্রসাবে কিটোন বের হয়
অন্য কোন জরুরী অবস্থায়
কোন কো রোগী রোজা করতে পারবেন ঃ
যাদের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করলে রোগ নিয়ন্ত্রিত হয়
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও খাবার বড়ি খেয়ে যারা রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও একবেলা ইনসুলিন নিচ্ছেন এমন রোগী
কি করতে হবে :
যে খাদ্য আপনাকে খেতে বলা হয়েছে তাই আপনি চালিয়ে যাবেন।
যতটুকু সন্ধ্যা রাত্রে খাবেন ঠিক ততটুকু শেষ রাত্রে খাবেন
শেষ রাত্রে খাবার যতটুকু দেরী করে খাওয়া যায় ততই মঙ্গল। কোন ক্রমে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাবেন না
স্বাভাবিক কাজ কর্ম চালিয়ে যাবেন, তবে বিকালে কিছুটা বিশ্রাম নিবেন
অতি সতর্কতা অবলম্বন করে রোজা রাখলে ডায়াবেটিস কন্ট্রোল সুন্দর হতে পারে
বড়ি খেতে হলে তা সন্ধ্যা রাত্রেই খাবেন। তবে দীর্ঘ মেয়াদী বড়ি যেমন, ঈযষড়ৎঢ়ড়সরফব খাবেন না। স্বল্ব মেয়াদী বড়ি যেমন রাসটিনন খাবেন। ডোজ ঠিকই রাখতে হবে।
দু’বার বড়ি খেতে হলে সন্ধ্যায় ও শেষ রাত্রে খেলেই চলবে। তবে সন্ধ্যা রাত্র থেকে ভোর রাত্রের ডোজ অর্দ্ধেক করতে হবে।
৪০ ইউনিটের কম যারা ইনসুলিন নিয়ে রোগ দমন করতে পারেন তারা রোজা করতে পারেন ইনসুলিন সন্ধ্যা রাত্রে নিতে হবে।
ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও আমাদের করণীয় কাকঃ
ইনসুলিন নির্ভর থেকে ইনসুলিন অনির্ভর (ঘড়হ ওহংঁষরহ ফবঢ়বহফবহঃ ফরধনবঃবং সবষষরঃঁং-ঘওউউগ) রোগীর সংখ্যা বেশী হওয়া সত্বেও ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতি বেশী নজর দেয়া হয়। ইনসুলিন অনির্ভর রোগীদের চিকিৎসা সাধারণ চিকিৎসক বা ডায়াবেটিস চিকিৎসা কেন্দ্রের নবীন ডাক্তারগণই করে থাকেন। এরা অসুস্থ থাকে এবং তাদের মৃত্যুর হার বেশী। ফলে সম্প্রতি এই সব রোগীদের চিকিৎসায় সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। তবে চিকিৎসা পদ্ধতি বিভিন্ন কেন্দ্রে বা দেশের ভিন্নতর। ইউ.এস. এ. দেশব্যাপী কার্যক্রম তৈরী করেছে এবং ডাক্তারদের জন্যে লিখিত ইনসুলিন অনির্ভর রোগীর চিকিৎসা নীতিমালা তৈরী করেছে। ইউরোপের ডায়াবেটিস চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন ডাক্তারদের জন্যে প্রস্তুত এই নির্দেশিকা পুরোপুরি মেনে চলা যায় না। তাই ১৯৮৬ সবে ইউরোপের ১৪টি দেশের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞগণ আমষ্টারডামে মিলিত হয়ে ইউরোপের ইনসুলিন অনির্ভর রোগীদের চিকিৎসা নীতির ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছান এবং তারই আলোকে এই প্রবন্ধ রচিত হল।
ইউরোপে ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিস একটি বহুল নির্মিত বিপাকের গোলযোগ জনিত রোগ। এই প্রতিক্রিয়া শরীরে কম মারাত্মক হতে পারে তা সব সময়ে বিবেচনায় আনা হয় না। এই রোগের রোগী এ কারণেই সঠিক চিকিৎসা সব সময় পায় না। ফলে তাদের জীবন মান ুন্ন হয়, মৃত্যু বেশী ঘটে এবং স্বাস্থ্যখাতে অনেক ব্যয় করতে হয়।
সারণী-১
ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিস এর রোগীর জীবনের উপর প্রভাব :
জীবনের মান কমে যায়
মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়
তীর বিপাক জনিত জটিলতা (হাইপার অসমোলার কমা, কিটোসিস ও মারাত্মকভাবে রোগাগ্রস্থ) হওয়া দেখা দিতে পারে
রক্তে চর্বির আধিক্য ঘটায়
দীর্ঘ স্থায়ী জটিলতা দেখা দেয়
ম্যাক্রোএনজিওপ্যাথী
(প্রান্তীয় রক্তনালীর অসুখ ও কম অক্সিজেন সরবরাহ জনিত হৃদ রোগ্য।
উচ্চ রক্তচাপ ষ্ট্রোক, হৃদ্কার্য অমতা প্রকাশ পায়
স্বায়ু দুর্বলতা (ডায়াবেটিস পা, ব্যথা ইত্যাদি) দেখা দেয় পায়ে, ঘা হয় এবং সেজন্য
পা কেটে বাদ দিতে হতে পারে
ম্যাক্সোএনজিওপ্যাথী (ইনসুলিন নির্ভর রোগীদেরই মত তবে প্রলিফেরেটিভ রেটিনোপ্যাথী কম হয় এবং কিডনী শেষ স্তরের বৈকল্য দেখা দেয়
চোখে ছানি পড়তে পারে।
রোগ তথ্য :
ইউরোপের অনেক অঞ্চলের ইনসুলিন অনির্ভর রোগীর আপাতন জানা নেই। তবে জনসাধারনের মধ্যে শতকরা-১ ভাগের ও বেশী ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ৬৫ উর্ধের বয়স্ক লোকের মধ্যে এই হার শতকরা ১০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। বেশীর ভাগ লোক ৬৫ বছরের আগেই আক্রান্ত হয় এবং বেশীর ভাগ রোগীর বয়স ৭০ বছরে নীচে। কিন্তু এ হার এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিভিন্ন হয় এবং এটা নির্ভর করে আংশিক বংশগত এবং আংশিক পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর। এ রোগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মূলে রয়েছে সময় মত রোগ নির্ণয় হওয়া, কারণ সাধারণ মানুষের আয়ুবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং জীবনের উপর নানান ঘাত-প্রতিঘাত।
ইনসুলিন অনির্ভর রোগীর মৃত্যুর হার ডায়াবেটিস হীন লোকের চেয়ে দ্বিগুনের ও বেশী। ৫০ বছরের আগে আক্রান্ত রোগীর ৫ থেকে ২০ বছরের আয়ু কমে যায়। গড় হিসেব অনুযায়ী এই আয়ু কমার হার পুরুষের চেয়ে মহিলাদেরই বেশী। এটা বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে এবং যার ৭০ বৎসর বয়সের পরে ডায়াবেটিস হয়েছে তার ৩ বছর আয়ু কমে যাবে এবং সবচেয়ে কম হবে ৭৫ বছরে যার ডায়াবেটিস দেখা দিয়েছে।
ঘওউউগ এর মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে হৃদসংবহনতন্ত্র এবং মস্তিস্কের রোগ। রোগাক্রান্তের স্থায়ীত্বকাল ও বিপাকজনিত গোলাযোগ নিয়ন্ত্রনের উপর নির্ভর করে রোগীর রেটিনপ্যাথী বা নেফ্রোপ্যাথী (মাইক্রোএনজিওপ্যাথী) হবে কিনা।
রোগের উন্নতি পূর্বভাস শুধুমাত্র গ্লুকোজ বিপাকে ক্রিয়ার উপরেই নির্ভর করে না, উচ্চরক্ত চাপ, স্থূলতা, লিপিডের অস্বাভাবিকতা বিপরীত ধর্মী জীবনযাপন এবং ধূমপানের উপরেও নির্ভর করে।
চিকিৎসা :
চিকিৎসার প্রাথমিক উদ্দেশ্য অন্যান্য ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার মতই। এই চিকিৎসা রোগীকে রোগের লণ থেকে মুক্তি দেয়। স্বাভাবিক জীবন যাপনে সহায়তা করে, রোগের জটিলতা ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ হতে বাধা প্রদান করে, মাত্রাতিরিক্ত মৃত্যর হার কমায় এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক উপসর্গ হতে অব্যহতি দান করে।
বিপাকীয় গোলযোগ দমন করেই ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিস রোগীর রোগের লণ ও অন্যান্য উপসর্গ থেকে অনেকটা মুক্তি দেয়া যায়। সেজন্য প্রথমেই ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় এবং বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। ঘওউউগ এর সাথে সাথে প্রায়ই আরো অতিরিক্ত গোলযোগ, অমতা এবং জীবনের সীমাবদ্ধতা দেখা দেয়। সেজন্য রোগীকে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাই সর্বপ্রথম ল হওয়া উচিত। যদি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার খুব সম্ভাবনা থাকে অথবা বয়স্ক লোকদের বহু পুরাতন রোগ জটিলতা থাকে তবে সেখানে বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করাই বাঞ্চনীয় নয়। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার চাইতে উচ্চ রক্তচাপ, লিপিডের অস্বাভাবিকতা এবং ধুমপান বর্জন করাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হওয়া উচিত, নচেৎ রোগীর জীবনে হুমকি থেকে যাবে।
বিপাকীয় গোলযোগের চিকিৎসা :
ইনসুলিন অনির্ভর রোগীদের বিপাকীয় চিকিৎসা হচ্ছে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করা। এই রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করার প্রধান উপায় খাদ্য নিয়ন্ত্রণ। স্থূলকায় ব্যক্তির অতিরিক্ত ওজন হ্রাস, রক্তে চর্বি পরিমাণ কমানো, পরিমাণ মত শারীরিক ব্যায়াম, পরামর্শমত খাবার বড়ি বা ইনসুলিন গ্রহণ।
শিক্ষা :
শিক্ষার উপর এই চিকিৎসার সাফল্য নির্ভর করে। শিা চিকিৎসার নিরাপত্তা বিধানের উন্নতি সাধন করে, বিপাক ক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণের গুণাগুণের উন্নতি বিধান করে, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক উন্নতি ঘটায়, রোগ জটিলতা ও ব্যয় হ্রাস করে। রোগী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে শিা বিস্তার করা উচিত। শিার পরিকল্পনায় ডায়াবেটিস ও তার চিকিৎসা, পুষ্টির চাহিদা-খাদ্য বন্টন, সঠিক ওজন অর্জন ও বজায় রাখা যায়। দৈহিক কার্যের নিয়মাবলী নিজ পর্যবেণ কিভাবে জীবনের ধারা পরিবর্তনরা যায় এবং কিভাবে জরুরী অবস্থায় টিকে থাকা যায় যেমন হাইপোগ্লোইসিমিয়ার ঔষধ অথবা ইনসুলিন দ্বারা চিকিৎসাকৃত রোগী যে কোন প্রতিক্রিয়া মোকাবিলা করতে পারে ইত্যাদিও শিার পরিকল্পনায় থাকা উচিত।
আরও, দীর্ঘ মেয়াদী অসুবিধা সমন্ধে রোগীর জানা উচিত যেমন- ডায়াবেটিসের বিভিন্ন অবস্থায় খাদ্যের প্রতি যতœ, নিউরোপ্যাথী, করোনারি হার্ট ডিজিজ, চোখের পরিবর্তন ও হাইপারটেনশন। অনেক ইনসুলিন অনির্ভর রোগীর বংশগত অবস্থা, শারীরিক ওজন ও দৈহিক কার্যাবলী ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
খাদ্য
ডায়াবেটিস রোগীদের কি ধরণের খাবার দেয়া যাবে সেই পরামর্শ দেবার পূর্বে মোট কত ক্যালর ী গ্রহণ করতে হবে সেটা জেনে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন কেননা স্বল্প পরিমাণ খাদ্য বাদ দিলে ঔষধ ছাড়াই ইনসুলিন অনির্ভর রোগীর রক্তের শর্করা কমে স্বাভাবিক হয়। স্থলূতা ডায়াবেটিস রোগ হতে সাহায্য করে। ডায়াটারী পরামর্শ মেনে চললে গ্লুকোজ কমে আসে। ওজন কমালে ইনসুলিন রেজিসটেন্স কমে যায় এবং যকৃত গ্লুকোজ উপাদানও কমে যায়। তালিকাভুক্ত খাবার গ্রহণ করলে অনেক রোগী ভাল থাকেন।
সাধারণত শর্করা জাতীয় খাবার পরিমাণ মত খাওয়া উচিত এবং চর্বি কম খাওয়া উচিত। প্রযোজনীয় শক্তির শতকরা ৫০-৫৫ জটিল শর্করা, ২০-৩০% চর্বি এবং ১৫ আমিষ থেকে আসা উচিত। সম্পৃক্ত চর্বি একক সম্পৃক্ত চর্বি এবং বহু অসম্পৃক্ত চর্বি ১ ঃ ১ঃ ১ এই অনুপাতে গ্রহণ করা উচিত।
এই ধরণের খাদ্য তালিকা দ্বারা কোলেষ্টেরল আপনা থেকেই কমে যায় এবং কোলেষ্টেরল কমানোর জন্য এর থেকে ভাল পরামর্শ রোধ হয় আর প্রয়োজন নেই। উচ্চ আশযুক্ত শর্করা গ্রহণে রক্তের গ্লুকোজ কম বাড়ে। সব জাতের খাদ্য নিয়মিত ও পরিমিত খেতে হবে। মন চাইলে চিনির বিকল্প হিসেবে স্যাকারিন বা এপারটেম খাওয়া চলবে।
ব্যায়াম
ব্যায়াম সর্বোতভাবে উপকারী। বিশেষত এটা আস্তে আস্তে অধিকতর ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তা করে। এইভাবে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখে। কোলেষ্টেবল এবং ট্রাইগ্লিসেরাইড কমায় ও হাইডেনসিটি লাইপোপ্লোটিন বৃদ্ধি করে। ব্যায়াম শরীরের ওজন ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
কোন কোন রোগী ব্যায়াম করতে পারবে না ঃ
১। বিপাকের গোলযোগ দমন হয় নাই এবং কিটেসিন দেখা দিয়েছে
২। রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা প্রতি লিটারে ১৬.৭ মিলি মোলের উপরে
৩। চোখের রেটিনার বা কিডনির রোগ বেড়ে যাচ্ছে
৪। হৃদ শূল (ইসকিমিক হার্ট ডিজিজ) দেখা দিয়েছে
৫। গিড়ায় ব্যথা দেখা দিয়েছে ও অন্যান্য বয়সের কারণে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিয়েছে
মুখে খাবার ঔষধ
যখন নিয়ন্ত্রিত খাবার দেয়া সত্ত্বেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না তখন চিকিৎসকগণ ইনসুলিন বা মুখে খাবার ঔষধ দেবেন কিনা এটা তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যখন খাদ্য এবং ব্যায়াম ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয় তখনই চিকিৎসকগণ অতিরিক্তভাবে —— এর কথা প্রথমেই চিন্তা করে। —- ইনসুলিন নিঃসরণে সাহায্য করে, রক্তে শর্করা দমন করে রাখে এবং ইনসুলিন স্পর্শ কাতরতাকে উন্নত করে। —- একটা অথবা এর থেকে একটু বেশী খেয়ে ডায়াবেটিসকে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তবে —- বন্ধ করে দিয়ে দেখতে হবে ইহার আদৌ প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা। এই ঔষধটি আবার ইনসুীরন নির্ভর নয় এমন রোগীদের উপর সব সময় কার্যকরী হয় না। এবং যদিইবা কার্যকরী হয় তবে তার কার্যকাল হয় সীমিত। যদিও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অল্প কিন্তু যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা কমিয়ি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তবে এটা সাধারণত বয়স্কদের েেত্রই ঘটে থাকে। এই মৃত্যু ঝুকিটা আপাততঃ দৃষ্টিতে দীর্ঘকাল স্থায়ী থেকে স্বল্পকাল স্থায়ী ঔষধের েেত্র কম। কোরপ্রোপামাইড এবং গ্লিবেনকামাইড বয়স্ক রোগীদের েেত্র স্বল্প স্থায়ী ঔষধ দেয়া যুক্তি যুক্ত।
ইউরোপের কোন কোন অঞ্চলে মুখে খাবার বড়ির সাথে ইনসুলিন দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়। কোন কোন বিশেষজ্ঞ প্রস্তাব করেন যে যাদের ইনসুলিন নিঃসরণ মতা আছে তাদেরকে এইরূপ যৌথ ঔষধ দেয়া যেতে পারে। তবে এটা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। বায়গুয়ানাইডলের মোটা কিন্তু ইনসুলিন নির্ভরশীল নয় এমন রোগীদের উপর এখনো পর্যন্ত যথেস্ট ভূমিকা রয়েছে। তাদের সঠিক ধর্মগুলো হলো রক্তের শর্করা কমায়, উচ্চ সিরাম ইনসুলিনের পরিমাণকে কমায়, লিপিডের মাত্রা কমায় এবং ফিবরিনোলাইটটিক (—) কার্যাবলীকে উদ্দীপ্ত করে। এসব ঔষধ যারা মোটা ও যাদের লিপিডের পরিমাণ অধিক রয়েচে তাদের জন্যে খুবই কার্যকর। খুব মোটা ছাড়া (যার বি,এম,আই ৩০ এর বেশী) তাদের ছাড়া শুধু রায়গুয়ানাইড দিয়া চিকিৎসা সর্বসম্মত নয়। সাধারণতঃ যখন ইনসুলিন দেয়া নির্দেশ না করে তখন সালফানিল ইউরিয়ার সাথে ইহা ব্যবহৃত হয়। ৬৫ বৎসরের বেশী বয়সের রোগীদের বায়াগুয়ানাইড ব্যবহার না করাই উচিত। সঠিক পর্যবেণের মাধ্যমে লেকটিক এসিডোসিস রোধ করা যায়। মেটফরমিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম থাকায় এই ঔষধ বেশী ব্যবহার করা যায়।
ইনসুলিন
ইনসুলিন নির্ভর নয় এমন রোগীদের ইনসুলিন ব্যবহার করা উচিত নয় যদি গ্লাইসোমিয়াকে —- খাদ্য এবং ব্যায়ামের দ্বারা নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে রাখা যায়। এ ছাড়াও ইনসুলিন ব্যবহার করা উচিৎ নয় যদি কোন রোগী হাসপাতাল থেকে রক্ত শর্করাকে নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে রাখতে সম হয়েছিল, কিন্তু বাড়ীতে থেকে আর ইনসুলিন নিতে চান না বা নেয়া তার জন্যে কষ্টকর। ইনসুলিন নির্ভর নয় এমন রোগীদের েেত্র ইনসুলিন দেয়া যেতে পারে যদি দেখা যায় যে২ চিকিৎসা যথাযথভাবে গ্রহণ করেও রক্তে শর্করা সব সময় নির্দিষ্ট সীমানার উপরে রয়েছে। ইনসুলিন নির্ভর নয়এমন রোগীদের মাঝে মধ্যে রোগ দমনের জন্যের ইনসুলিনের প্রয়োজন হতে পারে।
কিছু সংখ্যক রোগীর বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত থাকে যদি প্রত্যহ এক অথবা দুই মাত্রায় মধ্যম মেয়াদী ইনসুলিন দেয়া হয়। সাথে ণস্থায়ী ইনসুলিন যোগ করে বা না করেও রক্তের শর্করা স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হলে ইনসুলিন অনির্ভর রোগীদের ইনসুলিন নির্ভর রোগীদের মত প্রশিণ নিয়ে নিবিড়ভাবে, নিয়মিত ও পরিমিত ইনসুলিন দ্বারা চিকিৎসাকৃত সমস্ত অনির্ভর রোগীদের সঠিকভাবে নিজ পর্যবেণ নিজে করা খুবই প্রয়োজন।
বিপাক প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ-এর নিয়মিত পর্যবেণ
চিকিৎসার একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্রায় স্বাভাবিক মাত্রায় রক্তে গ্লুকোজ-এর পরিমাণ বজায় রাখা। কিন্তু এই উদ্দেশ্য কখনও কখনও উপসর্গ দূরীকরণের জন্য ইনসুলিন নির্ভর নয় এমন ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে শিথিল করা হয়। তা সত্ত্বেও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা প্রত্য অথবা পরোভাবে সব ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেই পর্যবেণ করে যেতে হবে। অধিকন্তু রক্তে লিপিডের পরিমাণও নিয়মিতভাবে দেখতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগীদের অথবা অসুস্থ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে প্রস্রাবে কিটোন বড়ি আছে কি-না তা ও দেখা দরকার। এর দ্বারা — হলো কি না বুঝা যাবে।
রোগী যদি নিজেই রোগের ভালমন্দ দেখার কাজ করেন তবে উত্তম। তাকে পুরো ব্যাপারটা অর্থাৎ কিসে নিয়ন্ত্রণ হয় এবং কি করলে নিয়ন্ত্রণ হলো কিন-না বুঝা যায় তা বলে দিলে তিনি নিজেই সেভাবে চলতে পারেন। ফলে নিয়ন্ত্রণ ভালৈা হয় এবং চিকিৎসা অধিকতর নিরাপদ হয়ে উঠে। কিন্তু এর জন্য নিয়ন্ত্রণ বুঝার পরীক্ষা ও তার ফলাফল রোগীকে বুঝিয়ে রোগীর ডায়েরীতে প্রমাণরূপে লিখে রেখে দেয়া দরকার।
(ক) প্রস্রাবে গ্লূকোজ : রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা বুঝার জন্য প্রস্রাবে গ্লুকোজ এর পরীক্ষা একটি খুব জরুরী পরীা। কিডনী যদি ঠিকভঅবে গ্লুকোজ ব্যবহার করে তবেই এই পরীক্ষা করার যথার্থতা আছে। রক্তে যাদের গ্লুকোজ খুব বেশী পরিমাণে আছে এবং যাদের গ্লুকোজ একেবারে স্বাভাবিক মাত্রায় রাখা যাচ্ছে না অথবা যাদের রক্তে এ গ্লুকোজ মাপা সম্ভব নয় (যেমন-যে সকল রোগী পল্লী অঞ্চলে বাস করে) অথবা যে রোগী রক্ত পরীার জন্য দিতে চান না তাদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবে গ্লুকোজ আছে কিনা এই পরীক্ষা খুবই জরুরী ও সাহায্যকারী।
(খ) রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা : এই পরীক্ষা ইনসুলিন নির্ভর নয় এমন ডায়াবেটিস রোগী যারা সাময়িকভাবে ইনসুলিন নিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রের অপরিহার্য। ইনসুলিন নেবার আগে ও খাবার পর ১.৫ থেকে ২ ঘন্টা পর) রক্তে গ্লুকোজ কতটা আছে এই পরীক্ষা সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন করলেই চলে। খুব বেশী গ্লুকোজ আছে যার রক্তে অথবা যার উচুমাত্রায় ইনসুলিন লাগছে তাদের ক্ষেত্রের আরও ঘন ঘন পরীক্ষা লাগতে পারে। রোগীকে বুঝিয়ে দেয়া দরকার কত বেশী গ্লুকোজ থাকলে কতটুকু ইনসুলিন দিয়ে তা নামিয়ে স্বাভাবিক বা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা যাবে।
অল্প বয়েসী ডায়াবেটিস, নিয়মিত ঔষধ (মুখে) খাচ্ছেন ও যাদের কিডনী থ্রেসহোল্ড বেশী এমন রোগীদের ক্ষেত্রের নিয়মিতভাবে নিজের রক্তের গ্লুকোজ নিজেই পরিমাণ করতে শিখলে ভাল হয়। পরীক্ষা করতে হবে খালি পেটে অথবা যাবার ১ ঘন্টা থেকে ২ ঘন্টা পর, অন্ততঃপে সপ্তাহে একবার।
(গ) গ্লাইকোসাইলেটেড হিমোগ্লোবিন (—-)
প্রতি ২-৩ মাসে গ্লাইকোসাইলেটেড হিমোগ্লোবিন পরীা করা উচিত। রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ নির্ধারণের জন্য ফ্রোকটোসমিয়া এবং গ্লাইকোসাইলেটেট সিরাপপ্লোটিন পরিমাণ করা যায় তবে তা স্বল্প মেয়াদী নিয়ন্ত্রণ নির্ধারক প্রস্রাবের কিটোন পরীক্ষা করতেই হবে যখন প্রতি লিটার গ্লুকোজ রক্তে ২০ সমান মিলিমোলের ৩৫০ মিলিগ্রামের সমান সমান অথবা বেশী শর্করা থাকে।
(ঘ) ডাইসলাপো প্রোটিনিমিয়া (—-)
বেশির ভাগ ইউরোপীয় দেশে শতকরা ৫০ —- রোগীই ডাইসলাইপোপ্রোটিনেমিয়া আক্রান্ত। যেহেতু কোলেসটরল ও ট্রাইগ্লিসারাইন্স —– এর ম্যাক্রোভাসকুলার রোগের মারাত্মক ঝুঁকি বহন করে সেজন্যই প্রতি বছর মোট সোলেসটেবল, হাইডেনসিসিট লাইপোপ্রোটিন কোলেসটবল এবং ট্রাইগ্লিসারাইট বছরে অন্ততঃ একবার পরীক্ষা করার জন্য বলা হয়ে থাকে। যদি পরীক্ষা করার পর দেখা যায় যে রক্তের এই উপাদানগুলি অস্বাভাবিক থাকে তবে প্রতি তিন মাস পর পর রক্তের এই উপাদানগুলি পরীক্ষা করা উচিত।
রোগ সম্বন্ধীয় পর্যবেণ :
রোগীর জীবনে রোগের প্রভাব ও জীবন যাত্রার মান নিভৃর করে দীর্ঘস্থায়ী এই রোগ সৃষ্ট জটিলতা এবং অন্যান্য রোগের উপর। বিশেষ ভাবে মনোযোগ দেয়া উচিত যাতে বিভিন্ন রোগের কারণগুলি বের করা যায় এবং পূর্বাহ্নে অনুবেণ, পর্যবেণ এবং চিকিৎসা করা যায়, বিশেষভাবে হাইপারটেনশান, ধূমপান, কেটারেক্ট, পায়ের ক্ষত, নিউরোপ্যাথি এবং ম্যাক্রোভাসকুলার অসুখ সমুহের সময় মত যথাযথ চিকিৎসা করা সম্ভব হয়।
নিজে নিজেই কি করে রোগের গতি প্রকৃতি জানতে পারা যায়।
প্রস্রাব , প্রথমে খাবার পর প্রস্রাব পরীক্ষা
অথবা
অভুক্তাবস্থায় প্রসাব পরীক্ষা (ঘুম থেকে উঠার পর অথবা দ্বিতীয় বার প্রস্রাব করার পর) অথবা বিকালের প্রস্রাব সপ্তাহে ২ বার।
রক্ত:
একবার বিভিন্ন সময় পরীক্ষা অথবা
ইনসুলিন নেয়ার আগে পরীক্ষা, খাবার পর পরীক্ষা এবং ঘুমাতে যাবার সময় সপ্তাহে অন্তত ২ বার।
অভূক্ত অবস্থায়, খাবার (দুপুরের) আগে এবং ঘুমাতে যাবার আগে সপ্তাহে ২ বার।
এই নিজে নিজে দেখা কতখানি কার্যকর তা জানার জন্যে বছরে অন্ততঃ ২ বার ডাক্তার দ্বারা পরীা করিতে নিতে হবে।
অন্য রোগ থাকলে বা জীবনধারা পাল্টে গেলে বাড়তি প্রয়োজনীয় পরীা করাতে হবে।
নিয়মিত ওজন দেখতে হবে।
কম ইনসুলিন গ্রহণ করেও বয়সীদের নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ দেখতে হবে।
কি কি নিদানিক পরীক্ষা করতে হয়
প্রথম : পুরা ডাক্তারী পরীা, ওজন, রক্তচাপ, ইসিপিজ, হিমোগ্লোবিন এ১ সি (অথবা ফ্রকটোসামাইন) সিরাম কোলেসটেরল, যদি ২০০০ মিঃ গ্রাম % এর উপরে থাকে (৫.২ মিঃ মো/লিঃ) তবে এইচ, ডি,এল, কোলেসটেরল করাতে হবে।
ট্রাইগ্লিসেরাইড
প্রস্রাবের গ্লুকোজ, প্রোটিন, কিটোন ও অনুবীণ পরীক্ষা
শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
নিজের রোগ কেমন তা দেখতে শিখাতে হবে
স্নায়ু দুর্বলতা আছে কিনা তা দেখতে হবে
চোখের মনি বড় করে ফান্ডাসকোপী করতে হবে
চোখের দৃষ্টি কেমন তা বুঝতে হবে।
রক্তের প্লাজমা ক্রিয়াটিনিন, ইলেকটোলাইট ও গ্লুকোজ দেখতে হবে।
খাদ্যের জন্যে উপদেশ দিতে হবে মাসে ১ কি ২ বার শিক্ষা কার্যক্রম
চালাতে ওজন ও রক্তচাপ দেখতে হবে।
খাবার পরে রক্তের গ্লুকোজ দেখতে হবে।
প্রতি ৩ মাসে
হিমোগ্লোবিন এ১ সি
রক্তের চর্বি (যদি বাড়তি থাকে)
প্রস্রাবের প্রোটিন
বাৎসরিক
প্রথম বারের সব প্রাণ রসায়নিক পরীক্ষা হলে জটিলতা দেখা দিয়েছে কিনা বিশেষ করে মাইক্রোএনজিওপ্যাথি দেখা বা পরীক্ষা করা দরকার। দৃষ্টি শক্তি, প্রস্রাবের গ্লুকোজ, প্রোটিন, কিটোন ও অণুবিক্সণ পরীক্ষা ও চিকিৎসার পুনঃবিবেচান করা
যদি ভাল ফল না হয় তবে বিশেষজ্ঞের নিকট প্রেরণ করা।
আর্থ-সামাজিক:
ইনসুলিন নির্ভর নয় এমন রোগীদের রোগের উন্নতির প্রচেষ্টার অভাব হলো ব্যর্থতার কারণ। প্রতিটি দেশে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও চিকিৎসা ব্যবস্থার তারতম্যের উপর নির্ভর করে। চিকিৎসার সফলতা প্রায়ক্ষেত্রে রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা রোগী ও চিকিৎসকের উপর নির্ভর করে, এতে আঞ্চলিকতা প্রতিবন্ধক নয়। অপর্যাপ্ত জ্ঞান, সম্পদ, প্রাপ্য চিকিৎসার ব্যবস্থা, এছাড়াও প্রায় ক্ষেত্রে রোগীদের এবং ডাক্তারের ভাবের আদান-প্রদান বা সমঝোতার অসুবিধার জন্য চিকিৎসায় নানা রকম অসুবিধা দেখা দেয়। কিছু কিছু রোগ চিকিৎসায় যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয় তার মধ্যে ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা অন্যতম। অনেক ক্ষেত্রে অহেতুক অবাস্তব ব্যবস্থা চাপিয়ে রোগীর ও তার পরিবারের দোষ দেয়। সাধারণ ডাক্তার দিয়ে ইনসুলিন নির্ভর নয় এমন ডায়াবেটিস রোগীকে চিকিৎসা করানো উচিত প্রথমবার সম্পূর্ণভাবে চেকআপ করানো অত্যাবশ্যক।
পরবর্তীতে প্রত্যেক সাক্ষাৎকারে ৪টি প্রশ্ন করা ভাল
১। রোগী কেমন আছে ?
২। মেটাবলিক নিয়ন্ত্রণ সন্তোষজনক কিনা ?
৩। অসুবিধাগুলির অবস্থা কি ?
৪। অন্যান্য সমস্যা আছে কিনা ?
প্রশ্ন উত্তরের পরিপ্রেেিত রোগীকে সঠিক উপদেশ দেয়া উচিত।
মন্তব্য :
এই প্রবন্ধের একটি মূল কথা ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস রোগীকে সঠিক উপদেশ দিয়ে তার জীবনের মান উন্নয়ন করা যায়-বহুদিন যন্ত্রণামূক্ত রাখাও সম্ভব। ডাক্তার ও রোগী রোগ সম্বন্ধে বিস্তারিত ভাবে আলাপ-আলোচনা করে চিকিৎসার ল্য স্থির করে নিয়ে তা যথাযথভাবে মেনে চললে এ রোগের চিকিৎসায় সুফল পাওয়া সম্ভব। তাই আশা করি এ লেখা থেকে জেনে নিয়ে ও ব্যবস্থা গ্রহণ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রের উপকৃত হওয়া যাবে।
প্রস্রাব পরীার অন্যান্য নিয়ম
কাঠি প্রস্রাবে ভেজান বা কাঠির উপর প্রস্রাব করুন যাতে কাঠিতে লাগান ওষুধ ভিজে।
৩০ সেকেন্ড বা আধা মিনিট পর কাঠি রাখা কৌটার গায়ের রঙের তালিকার সাথে রঙ মিলিয়ে সুগার আছে কিনা জেনে নিন। এভাবেই গ্লুকোটেস্ট, র্যাপিগনস্ট প্রভৃতি কাঠি দিয়ে প্রস্রাব পরীক্ষা করা যায়।
কিটোন কাঠি প্রস্রাবে ভিজান বা কাঠির উপরেই প্রস্রাব করুন যাতে কাঠিতে লাগান ওষুধ ভিজে। কিছুণ (১৫ সেকেন্ড) পর কাঠি রাখ কৌঠার গায়ের রঙের তালিকার সাথে রঙ মিলিয়ে কিটোন আছে কিনা জেনে নিন।
কিটো-ডায়াসটিকস কিটোন ও সুগার কাটি
কিটো- ডায়াবেটিকস দিয়ে প্রস্রাব পরীক্ষা
কাঠির নীচের দিকের রঙ সুগারের ও উপরের রঙ কিটোনের
প্রস্রাবে কাঠিটি ভেজান অথবা কাঠির উপর প্রস্রাব করুন যাতে কাঠিতে লাগান ওষুধ ভিজে
কিছুণ (১৫ সেকেন্ড) পর কাীঠ রাখা কৌটার গায়ের রঙের তালিকার সাথে রঙ মিলিয়ে দেখুন কিটোন-সুগার আছে কিনা)।
ইনসুলিন ইনজেকশন দেয়ার নিয়ম :
ক) দুহাতের মাঝখানে ইনসুলিনের শিশু ঘুরান
খ) শিশির মুখে স্পিরিট মাখানো তুলা দিয়ে পরিস্কার করুন। ফুটানো পানিতে পরিস্কার করা সিরিঞ্জে যতটুকু ইনসুলিন দরকার ততটুকু বাতাস টেনে নিন এবং সুচ শিশির মুখের রাবারের মাঝখান দিয়ে ভিতরে ঢোকান। এখন সিরিঞ্জসহ শিশিটা উল্টিয়ে ধরুন। দেখবেন এমনিতেই সিরিঞ্জে ঔষধ আসছে।
গ) দেখুন, সিরিঞ্জে যেন একটু বাতাস বা বুদবুদ না থাকে।
ঘ) যে স্থানে ইনজেকশন নেবেন, সে স্থানে স্পিরিট মাখান তুলা দিয়ে পরিস্কার করুন এবং ছবিতে যে রকম দেখান হয়েছে সেরকম চামড়া টেনে দরুন ও সূঁচ টেনে নিন এবং ঐ স্থানটা আস্তে করে চেপে রাখুন।
ঙ) চামড়ার নীচে ইনজেকশন নিবেন।
চ) শরীরের কোন কোন জায়গায় ইনজেকশন নেয়া যায় ছবিতে দেখান হল (কাল রঙ এর জায়গাগুলিতে)
সচরাচর ব্যবহৃত মুখে খাবার বড়ি (সালফোনিল ইউরিয়া)
বড়ির নাম রক্তের কত ঘন্টা থাকে
ইনসুলিনের নাম ক্রিয়া সম্পন্ন ইনজেসথনের পর কাজ শুরু সবেচেয়ে ক্রিয়া স্থিতিকাল
সেমিলেন্টি এম. সি দ্রুত .৫-১ ঘন্টা ২-৪ ঘন্টা ১২-১৬ ঘন্টা
এক্ট্যাপিড এম. সি দ্রুত .৫ ঘন্টা .৫-৫ ঘন্টা ৮ ঘন্টা
র্যাপিপ্টার্ড এম. সি দ্রুত .৫-১ ঘন্টা ৪-১২ ঘন্টা ১১-২২ ঘন্টা
এন পি এইচ মাঝারী দ্রুত ১.৫ ঘন্টা ৬-১২ ঘন্টা ১৮-২৪ ঘন্টা
লেন্টি এম. সি মাঝারী দ্রুত মাঝারী দ্রুত ১.৫ ঘন্টা ৬-১২ ঘন্টা ১৮-২৪ ঘন্টা
মনোটার্ড এম. সি মাঝারী দ্রুত ১.৫ ঘন্টা ৭-১৫ ঘন্টা ২২ ঘন্টা
আলট্রা লেন্টি মে. সি ধীরে ৬-১০ ঘন্টা ১৮-২৪ ঘন্টা ৩৬ ঘন্টা +
চিকিৎসকের পরামর্শ মতো দ্রুত কার্যকরী ইনসুলিনের সাথে মাঝারী বা ধীরে কার্যকরী ইনসুলিন মিশিয়ে ইনজেকশন নেওয়া যায়।
সচরাচর ব্যবহৃত মুখে খাবার বড়ি (সালফোনিল ইউরিয়া)
বড়ির নাম রক্তের কত ঘন্টা থাকে কতণ কার্যকরী থাকে ২৪ ঘন্টায় প্রস্রাব কতটুকু বের হয় দৈনিক মাত্রা
টলবুটামাইড (রাসটিসনন) ৫-১০ ৬-৮ ঘন্টা প্রায় সবটুকু ০.৫-৩ গ্রাম (১ বার বা দুইবার)
কোর প্রপামাইড ২৪-৪০ ৩৬ ঘন্টার উপরে ৯৯% ১০০-৫০০ মিলিগ্রাম (একবার)
গ্লিবেন কামাইড (ডায়োনিল, ইউগ্লিকন ডাইবিনন, গিলিমল) ১০ স্বাল্পন স্থায়ী-তবে বেশী মাত্রায় খেলে দীর্ঘ সময় কাজ করে ৫০% প্রস্রাব ৫০% পিত্তরস ১৫-২০ মিলিগ্রাম (১ বার বা দুইবার)
১০. স্বাভাবিক দেহে রক্তের শর্করার পরিনাণ :
স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে শর্করার পরিমাণ প্রতি ১০০ মিলি লিটারে ৩.৫ থেকে ৫.৪ মিলিমোল ( বা ৬৩ থেকে ১৮ মিলিগ্রাম, “সোমোগি ও নেলসন” পদ্ধতি পর্যন্ত হতে পারে। খাবার পরে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এক, দেড় দু’ঘন্টা পরে যথাক্রমে ৮.৮ ৮.৭ ও ৬.৬ মিলিমোল ( বা ১৬০, ১৪০ ও ১২০ মিলিগ্রাম) হয়। তিন ঘন্টার মধ্যে শর্করার পরিমাণ আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ৬৪৬ নম্বর রিপোর্টে (দ্বিতীয় রিপোর্ট, ১৯৮০) শর্করা সম্বন্ধে অপর পৃষ্ঠায় বিবর দেওয়া হয়েছেঃ
শর্করার পরিমাণ
ধমনীথেকে নেয়া পুরা রক্ত সূক্ষ উপশিরা থেকে নেয়া রক্ত ধমনীর রক্ত রস
ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস :
অভূক্ত অবস্থায় ৭.০ মিলিমোলের সমান বা বেশী ৭ মিলিমোরের সমান বা বেশী সমান বা বেশী ৮.০ মিলিমোলের রং/অথবা
গ্লুকোজ খাওয়ার ১০.০ মিলিমোলের সমান ১১.০ মিলিমোলের সমান বা সমান বা বেশী
২ঘন্টা পরে বা বেশী বেশী সমান বা বেশী
গ্লুকোজ সহ্যগুণের দুর্বলতা —–
অভূত ৭.০০ মিলিমোলের চেয়ে কম ৭ মিলিমোলের চেয়ে কম ৮.০ মিলিমোলের চেয়ে কম গ্লুকোজ খাওয়া
৭.০ মিলিমোলের সমান ৮.০ মিলিমোলের সমান বা ৮.০ মিলিমোলের
২ ঘন্টা বা বেশী থেকে ১০.০ মিলিমোলের চেয়ে কম বেশী থেকে ১১.০ মিলিমোলের চেয়ে কম সমান বা বেশী থেকে
মিলিমোলের চেয়ে কম চেয়ে কম ১১.০ মিলিমোলের চেয়ে কম
(মিলিমোলকে ১৮ দিয়ে গুণ করলে মিলিগ্রামের হিসাব পাওয়া যায়)
ডায়বেটিস রোগে খাদ্যের ভূমিকা
খাদ্যের নিয়ন্ত্রণ ডায়বেটিস রোগ দমনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য থেকে প্রাপ্ত শক্তির একককে ক্যালরী বলে। পুষ্টির বিচারে ১০০০ গ্রাম পানির উষ্ণতা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়াতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয় তাকে ক্যালরী বলে। সাধারণ ক্যালরীর চেয়ে সহস্রগুণ বড় বলে এসে কিলো ক্যালরীও বলা হয়। ক্যালরীর পরিবর্তে জুলসও ব্যবহৃত হয়। ২৩০ গ্রাম পানির তাপ ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়াতে যে শক্তির প্রয়োজন তাহাই জুলস।
এক গ্রাম শর্করা থেকে ৪ ক্যালরী (১৭ জুলস) এক গ্রাম প্রোটিন বাংলায় আমিষ) থেকে ৪ গ্যালরী (১৭ জুলস) এবং এক গ্রাম চর্বি থেকে ৯ ক্যালরী (৩৭ জুলস) শক্তি পাওয়া যায়।
একজন ডায়বেটিস রোগীর কি পরিমাণ ক্যালরী প্রয়োজন তা নির্ভর করে তার ঃ (১) বয়স (২) উচ্চতা (৩) শরীরের গঠন (৪) কায়িক পরিশ্রম ও (৫) পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর।
কি পরিমাণ ক্যালরী দরকার তা বাঞ্চিত ওজন জেনে নিলে হিসেব করে বের করা সহজ হয়। এ জন্য আমেরিকান ডায়বেটিক সমিতির বহুল ব্যবহৃত নিম্নলিখিত পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। পুরুষ মানুষের প্রতি ৫ ফুট উচ্চতার জন্য বাঞ্চিত ওজন ধরা হয় ১০৬ পাউন্ড। এর পরের প্রতি ইঞ্চি উচ্চতার জন্য ৬ পাউন্ড করে যোগ দিতে হয়। উদাহরণঃ একজন ২৫ বৎসর বয়স্ক ডাক্তারের উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি হলে তার বাঞ্চিত ওজন হবে : ৫ এর জন্যে ১০৬ পাউন্ড।
এবং ৭ জন্য ৬ পাউন্ড হারে : ৬ দ্ধ ৭ = ৪২ পাউন্ড।
মোট ১৪৮ পাউন্ড
মহিলাদের জন্য প্রতি ৫ ফুট উচ্চতার জন্য ১০০ পাউন্ড ও পরবর্তী প্রতি ইঞ্চির জন্য ৫ পাউন্ড। উদাহরণ ঃ একজন মহিলা ডাক্তারের উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি হলে তার বাঞ্চিত ওজন হবে :
৫ ফুটের জন্য = ১০০ পাউন্ড
মোট = ১১০ পাউন্ড
একই বয়সের সবার গড়ন যেহেতু এক নয়, তাই এই বাঞ্চিত ওজনের সাথে শতকরা ১০ ভাগ বিয়োগ করে সর্বনিম্ন। পাতলাদের েেত্র এবং ১০ ভাগ যোগ করে সব্বোর্চ্চ (ভারীদের ক্ষেত্রে ওজন পাওয়া যায়।
শরীরের ভর নির্দেশক ওজন কিলোগ্রাম উচ্চতা মিটার২
পুরুষের এই নির্দেশক ২০-২৫ পর্যন্ত স্বাভাবিক ধরে নেয়া হয়, তবে ২২.১ হল আদর্শ। মহিলাদের েেত্র ইহা ১৯-২৩ এবং আদর্শ ২৬.৬। উপরোক্ত ফরমূলা থেকে আদর্শ ওজন জানতে হলে উচ্চতা মিটার কে দেহভর নির্দেশক দিয়ে পুরণ করলে তা পাওয়া যাবে।
উদাহরণ :
প্রশ্ন : একজন পুরুষ লোকের উচ্চতা ১.৬ মিঃ তার আদর্শ ওজন কত ?
উত্তর : আদর্শ ওজন= ১.৬২ দ্ধ ২২.১ = ৫৬.৫৮ কেঃ জিঃ
সর্বনিম্ন = ১.৬২ দ্ধ ২০ = ৬৪ কিলোগ্রাম
একইভাবে যদি কোন মহিলার উচ্চতা ১.৪৫ মিটার হয় তবে তার আদর্শ ওজন কত ?
উত্তর : আদর্শ ওজন
১.৪৫৬২ দ্ধ ২০.৬ = ৪৩.৩ কিলোগ্রাম
সর্বনিম্ন : ১.৪৫২ দ্ধ ১৯ = ৪০ কিলোগ্রাম
সব্বোর্চ : ১.৪৫২ দ্ধ ২৩ = ৪৮.৩ কিলোগ্রাম
এখন কাজের তারতম্য অনুসারে বাঞ্চিত ওজন ৩০, ৩৫, ৪০ দ্বারা গুণ করলে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালরীর হিসাব পাওয়া যাবে। যিনি হাল্কা কাজ করেন তার ওজনকে ৩০, যিনি মাঝারী কাজ করেন তার ওজনকে ৩৫ ও যিনি শক্ত কাজ করেন তার ওজনকে ৪০ দিয়ে গুণ করতে হবে।
উদাহরণ :
এক ভদ্রলোকের ওজন ৬৫ কিলোগ্রাম এবং তিনি অধিক পরিশ্রম করেন। তাঁর একদিনের জন্য কত ক্যালরী খাদ্য প্রয়োজন :
৬৫ দ্ধ ৪০ = ২৬০০ ক্যালরী।
খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফ, এ, ও) এর হিসাব মতে ক্যালরীর প্রয়োজনীয়তা নিম্নরূপ ঃ
দৈকি ক্যালরীর চাহিদা
বয়স রেফারেন্সের শতকরা পুরুষ মহিলা
২০-৩০ ১০০ ২৬০০ ২২০০
৩০-৪০ ৯৭ ২৫২২ ২১৩৪
৪০-৫০ ৯৪ ২৪৪৪ ২০৬৮
৫০-৬০ ৮৬.৫০ ২২৪১ ১৯০৩
৬০-৭০ ৭৯ ২০৫৪ ১৭৩৪
৭০ এর উপরে ৬৯ ১৭৯৪ ১৫১৮
ক্যালরী চাহিদা পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্যে কম বেশী হয়ে থাকে। ১০ক্ক সেঃ তাপে ক্যালরীর চাহিদা ১০০ ভাগ। এর থেকে তাপ কম হলে খাদ্যের প্রয়োজন বেশী হয় এবং বেশী হলে প্রয়োজন কমে যায়।
গর্ভকালে ও দুগ্ধদানকালে মায়েদের বেশী ক্যালরীর দরকার হয়
আমাদের দেশে ৬০ কিলোগ্রাম ওজনের একজন পরিশ্রমী ডায়াবেটিক রোগীর মোটামুটি সারাদিনে ২১০০ ক্যালরী হলে যথেষ্ট। এই ক্যালরী নিম্নোক্ত উপায়ে দেয়া যেতে পারে।
আমিষ (প্রোটিন) ২১০০ ক্যালরীর ১৬% অর্থাৎ = ৭৬.৮ গ্রাম
চর্বি জাতিয় (ফ্যাট) ২১০০ ক্যালরীর ২৫% অর্থাৎ = ৫৮.০ গ্রাম
শর্করা (কার্বহাইডেট) ২১০০ ক্যালরীর ৬০% অর্থাৎ = ৩১.৫ গ্রাম
একই রকম খাবার প্রতিদিন খাওয়া যায় না বলে একটি বিনিময় পদ্ধতিতে খাদ্যে পরিবর্তন আনা যায়। এই পদ্ধতি নিম্নরূপ ঃ
একটি শর্করা বিনিময় মোট ৭৫ ক্যালরী পাওয়া যাবে। ১৫ গ্রাম শর্করা, ২ গ্রাম প্রোটিন ও ১.৫ গ্রাম চর্বি থাকে এক শর্করা বিনিময়ে।
উদাহরণ অংশ
আটার রুটি পাতলা ১টা (৩০ গ্রাম)
পাউরুটি ১ আউন্স ১ টুকরা (.৫ ইঞ্চি পুরু) (ছোট রুটির ২ টুকুরা)
ব্রেড রোল অর্ধেকটা (৩০ গ্রাম)
নানরুটি অর্ধেকটা (৩০ গ্রাম)
ভাত .৭৫ কাপ (৬০ গ্রাম)
মুড়ি ২২ গ্রাম
চিড়া ২২ গ্রাম
খৈ ২২ গ্রাম
নডুলস রান্না করা ২২ গ্রাম
সুজি ১ কাপ (চিনি ছাড়া রান্না করা ২২ গ্রাম)
সেমাই ১ কাপ (চিনি ছাড়া রান্না করা ২২ গ্রাম)
বার্লি ২২ গ্রাম
সাগু ২২ গ্রাম
আলু ৯০ গ্রাম
মিষ্টি আলু ৮০ গ্রাম
নোনতা বিস্কুট ১৫ গ্রাম
পাকা কলা ১টা (মাঝারী)
আটা/ময়দা/চালের গুড়া ২২ গ্রাম
প্রোটিন বিনিময় :
এক প্রোটিন বিনিময়ে ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১.৫ গ্রাম চর্বি ও ৪০ ক্যালরী শক্তি থাকে। অন্য কথায়, ইহা ৩০ গ্রাম মাছের বা মাংসের পরিপূরক।
খাদ্যদ্রব্য পরিমাণ
মাছ (কাঁচা) ৩০ গ্রাম
মাংস ৩০ গ্রাম
মুরগির মাংস ৩০ গ্রাম হাড় ছাড়া
কলিজা ৩০ গ্রাম
ছানা .২৫ কাপ
পনির ১ টুকরা
ডিম ১টা
চিনা বাদাম ১০ গ্রাম (খোসাসহ ১৫-১৬ টা)
চর্বি জাতীয় খাদ্য বিনিময়
একটি চর্বি বিনিময় ১৫ গ্রাম চর্বি ও ১৩৫ ক্যালরী পাওয়া যায়। এই বিনিময় আধা আউন্স মাখন অথবা ১৫ গ্রাম ভোজ্য তেলের পরিপূরক।
খাবার তেল ৫ চা চামচ (১৩৫ ক্যালরী(
ঘি ৫ (১৫ গ্রাম) চা চামচ
ডালডা ৫ (১৫ গ্রাম) চা চামচ
মাখন ২০ গ্রাম
কেমন করে খাদ্য নির্বাচন করতে হবে :
চা, কফি ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাদ্যের বরাদ্দ ৪ আউন্স (১২০ মিলিমিটার)। ইহা হতে ৬ গ্রাম শর্করা, ৪ গ্রাম চর্বি এবং ৪ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
শর্করার মোট চাহিদা যেহেতু ৩১৫ গ্রাম সেহেতু দুধ থেকে প্রাপ্ত ৬ গ্রাম বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ ৩১৫-৯=৩০৯ গ্রাম শর্করা হলেই চলবে। ১ শর্করা বিনিময় ১৫ গ্রাম, অতএব ৩০৯ গ্রামের জন্যে ২০টি শর্করা বিনিময়ের প্রয়োজন।
দুধ ও শর্করা থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন ৪+৪০=৪৪ গ্রাম। মোট চাহিদা ৭৭ গ্রাম থেকে ইহা বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ ৭৭- ৪৪=৩৩ গ্রাম প্রোটিন ৫.৫ বিনিময়ে সরবরাহ করতে হবে। দুধ শর্করা ও প্রোটিন থেকে মোট ৩৪+৮=৪২ গ্রাম চর্বি পাওয়া যায়। বাকী ৫৮-৪২= ১৬ গ্রাম অর্থাৎ ১ চর্বি বিনিময় চর্বিজাতীয় খাদ্য থেকে পেতে হবে।
খাদ্য বিনিময় ক্যালরী
দুধ ১২০মিলিলিটার ৭৬
শর্করা ২০ বিনিময় ১৫০০
প্রোটিন ৫.৫ÑÑÑ ২২০
চর্বি ১– ১৩৫
ডাল ১৫গ্রাম ৫০
তরকারী ২(চামচ) ১০০
মোট= ২০৮১
যারা দুধ খেতে পারেন না তাদের জন্য
ডিম ১টা ৪০
শর্করা ২০ বিনিময় ১৫০০
প্রোটিন ৫.৫বিনিময় ২২০
চর্বি ১বিনিময় ১২৫
ডাল ২২ গ্রাম বিনিময় ৭৫
তরকারী ২(চামক) ১০০
ফল ১টা ২৫
মোট= ২০৯৫
কোন সময়ের খাদ্যে কত বিনিময়ের প্রয়োজনঃ
বিনিময় প্রাতঃরাশ মধ্য ভোর দুপুরের খাবার বিকালের খাবার রাত্রের খাবার শোবার সময়
শর্করা ৩ ২ ৬ ২ ৬ ১
প্রোটিন ১ ০.৫ ২ ০ ২ ০
দৈনিক খাদ্য তালিকাঃ
সকালের নাস্তাঃ
১. চাপাতি ২ খানা/পাউরুটি ২ টুকরা অথবা
অন্য কোন খাদ্য = ২ শর্করা বিনিময় =১৫০ ক্যালরী
২.গোল আলু ৬৬ গ্রাম/গাজর ১৫০ গ্রাম অথবা
অন্য কোন শাক-সবজি= ১ শর্করা বিনিময়= ৭৫ক্যালরী
৩.ডিম = ১টা = ৪০,,
৪. মাছ/ মাংস = ১ প্রোটিন বিনিময় ৪০,,
৫. চা চিনি ছাড়া = ১ কাপ ০,,
মেট= ৩০৫ ক্যালরী
১১টার নাস্তা :
১. বিষ্কুট ৩০ গ্রাম অথবা রুটি ২ টুকরা = ২ শর্করা বিনিময়= ১৫০ ক্যালরী
দুধ ১ গ্লাস (১২০ মিঃ লিঃ) =৮০ ক্যালরী
মোট= ২৩০ ক্যালরী
মধ্যাহ্ন ভোজন :
১. ভাত ৪.৫ কাপ অথবা চাপাতি ৬টা (১টা= ৩০ গ্রাম)
= ৪ শর্করা বিনিময় = ৪৫০ ক্যালরী
২. শাক-সবজি = ১ শাক-সবজি,, = ৫০ ক্যালরী
৩. মাছ/মাংস = ২ প্রেটিন,, = ৮০ ক্যালরী
মোট= ৬১৭.৫ ক্যালরী
বিকালের নাস্তাঃ
১. বিষ্কুট ৩০ গ্রাম
২. অথবা মুড়ি ৪৪ গ্রাম (৩কাপ) = ২ শর্করা বিনিময় = ১৫০ ক্যালরী
,, চিড়া ১ কাপ
,, খই ৪ কাপ =
৩. চা চিনি ছাড়া = ০ ক্যালরী
মোট = ১৫০ ক্যালরী
রাত্রের খাবার :
১। রুটি ৬টা : ৬ শর্করা বিনিময় = ৪৫০ ক্যালরী
২। মাছ/মাংস ৬০ গ্রাম : ২ প্রোটিন বিনিময় = ৮০ ক্যালরী
৩। ডাল আধ কাপ = ৩৭.৫ ক্যালরী
৪। তরকারী ১ শাক-সব্জি = ৫০ ক্যালরী
মোট = ৬১৭.৫ ক্যালরী
শোবার সময় :
১। রুটি ১ পিস অথবা বিস্কুট ১৫ গ্রাম ঃ ১ শর্করা বিনিময় = ৭৫ ক্যালরী।
২। ফল (১টা ছোট কমলা, ২৫ ক্যালরী।
১টা ছোট আপেল, ১টা ছোট পেয়ারা) ঃ ১০০ ক্যালরী।
তেল- ১৫ গ্রাম রান্নায় ব্যবহার করতে হবে ঃ ১৩৫ ক্যালরী।
মোট = ২০৯৫ ক্যালরী।
জাম্বুরা, কামরাঙা, ফুলকপি, শশা, খিরা, ঢেড়শ, মূলা ইত্যাদিতে দৈনিক ২৫০ গ্রাম খাওয়া যেতে পারে। কেননা এসব খাদ্যে তেমন একটা ক্যালরী থাকে না।
দৈনিক ৩ গ্রাম লবণ, কম সম্পৃক্ত চর্বি খেলে ভাল হয়। খাদ্য আঁশ ৩০ গ্রাম পরিমাণ হলে ুদ্রান্ত থেকে গ্লুকোজের বিশ্লোষন মন্থর হয় এবং রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্থির থাকে। খাদ্যের আঁশ তরিতরকারী ও ফলের খোসায় বেশী থাকে। এই সব আশযুক্ত খাবার খেলে রক্তের কোলেসটেরলের মাত্রাও কমে। যেহেতু এসব খাদ্য আয়তনে ভারি। তাই পেট ভরে গিয়ে খাবারের তৃপ্তি সহজে পাওয়া যায়।
পরিশেষে একটা কথা না বললে চলে না, সেটি হল ডায়াবেটিক রোগীগণ কখনও ছুড়ি ভোজ করবেন না। সময় ধরে পরিমাণ মত খেলে ডায়াবেটিস নিয়া স্বাভাবিক যাপন করা অসম্ভব হবে না।
১০০ গ্রাম খাদ্যে শর্করার পরিমাণ ঃ
যে সকল খাদ্যে ৩ থেকে ৬ শতাংশ শর্করা থাকে, ডায়াবেটিস রোগীগণ তা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। ৬ থেকে ১০ শতাংশ শর্করা যুক্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রিত পরিমাণ খাওয়া যায়। ১০ শতাংশের বেশী শর্করা থাকলে সেই খাদ্যে অন্য একটি খাদ্যের বিনিময় খাওয়া যায়।
খাদ্য %
ক) পাতা জাতীয় সবজি ৩-৫
খ) ঢেড়শ, বেগুন, গাজর, ফুলকপি, কাচা পেঁপে,
বাধা কপি, বাচা কাঁঠাল, লালচে সীম, লাল মূলা,
মিষ্টি কুমড়া, শালগম, কাচা আম, ৬-১০
গ) কাচা কলা, পেঁয়াজ ও আদা ১১-১৫
ঘ) বরবটি সবুজ সীম, কাঁঠালের বীচি, গোল আলু, মিষ্টি আলু ও রসুন ১৬-৩০
ঙ) তরমুজ ৩-৫
চ) কাল জাম, ডুমুর, জাম্বুরা (বাতারী লেবু) পেঁপে, ঘরমুজ ৬-১০
ছ) আমড়া, আপেল, আঙ্গুর, পেয়ারা, আম, (সাধারণ) কমলালেবু, নাশপাতি, আনারস, ডালিম ১১-১৫ জ) পাকা কলা, কাঁঠাল, আম (হিমসাগর ও ফজলী) ১৬-৩০
ঞ) চাল, রুটি, ময়দা, বার্লি, মুডি, চিড়া ৬০-৮০
ট) চিনি, গুড়, গ্লুকোজ ৯০এর উপরে
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে স্বপরিচর্যা :
প্রাপ্ত বয়স্কদের একশত জনের ১-৫ জনের ডায়াবেটিস রয়েছে। কোন কোন জনগোষ্ঠিতে এই হার আরও বেশী। ৫০০ শিশু ডায়কেটিসদের অন্ততঃ ১ জন এবং ২০০ কিশোর- কিশোরীদের অন্ততঃ ১ জনের জীবন রার জন্য ইনসুলিন দেয়া প্রয়োজন।
যারা ইনসুলিন নেন তাদের আয়ুর এক তৃতীয়াংশের কমে যায়। যৌবনে বা তার আগে ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ৬ জনের একজনের কিডনি রোগ দেখা দেবে এবং এদের শতকরা ৫০ ভাগ অকালে মৃত্যু বরণ করবে। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের চেয়ে মাঝ বয়সে ডায়াবেটিকগণের ১০ গুণ বেশী অন্ধ হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০ বৎসর পর্যন্ত যারা ডায়াবেটিস নিয়ে বেঁচে থাকেন তাদের ১০% দৃষ্টি শক্তি ক্ষীণ হয়। হাসপাতালে যাদের ভর্তি হতে হয় তাদের ১০ জনের ১ জন কিটোএসিডোসিস নিয়ে ভর্তি হন এবং এদের দশজনের ১ জনের ঐ কারণে মৃত্যু হয়।
আঘাতহীন কারণের জন্য যতটি হস্তপদ কেটে বাদ দেয়া হয় তাদের অর্ধেক বা তারও বেশী ডায়াবেটিস রোগী। ৫ জন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে অন্ততঃ ১ জনের পায়ে পচন ধরে।
যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের চেয়ে ২-৩ গুণ বেশী হৃদপীড়া বা হার্ট এটাক হয় ডায়াবেটিসদের। ৩০-৫০ শতাংশ চল্লিশ উর্ধ্ব উন্নত বিশ্বের ডায়াবেটিসদের মৃত্যুর কারণ করনারীহার্ট রোগ। এ তথ্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ৭২৭ নং ডায়াবেটিস সংক্রান্ত কারিগরী রির্পোটে ১৯৮৫ সনে প্রকাশিত হয়।
এই বিভীষিকা-ডায়াবেটিস আজীবনের রোগ
এই রোগের কারণ সুস্পষ্ট না হলে এ কথা স্পট যে বিপাক ক্রিয়া দমনের মধ্যেই রয়েছে এ রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রধান অন্তরায়। বেচে থাকার জন্য মানুষকে খেতে হয়। কষ্টার্জিত খাবার বিপাকের হের ফেরের জন্যে কাজে লাগে না, সৃষ্টি হয় ডায়াবেটিস। ৬.১৪
রোগটি বড়ই অদ্ভুত। কোন কোন রোগীর রোগ লন থাকেনা। অন্য কোন রোগের জন্য রক্ত ও প্রস্রাব পরীা করতে গিয়ে প্রথম রোগ ধরা পড়ে। এ রোগ নিয়ে বহুদিন কষ্ট ছাড়া দিব্বি বেঁচে থাকা যায়। এসব প্রতিকূল পরিবেশকে দমন করেই এ রোগ নিয়ে ২৫-৩০ বছর বেঁচে থাকা সম্ভব-যদি নিয়মিত চিকিৎসা চালানো হয়। এর চিকিৎসায় প্রথমেই সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় করতে হয়। রোগ নির্ণয়ের জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা রক্ত ও প্রস্রাব পরীা করান অপরিহার্য। এর পরে রোগ দমনের পালা, রোগী ও ডাক্তারের যৌথ সক্রিয় ভূমিকার ফলে সাফল্য জনকভাবে রোগ দমন করা সম্ভব। চিকিৎসা ফলে রোগীর কতটা উন্নতি ঘটল তা যাচাই করাও খুবই জরুরী। কারণ অভুক্ত অবস্থায় চেয়ে ভুক্ত অবস্থার রক্তের গ্লুকোজ বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধি যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তবে রোগ আর দমনে থাকলো না। ডাক্তারী ভাষায় আহারের পর রক্তে প্রাপ্ত গ্লুকোজ এর মাত্রা ডায়বেটিস মীমার নীচে থাকতেই হবে ৭-৮ মিলিমোল (বা ১৪০ মিঃ গ্রাম) এর কম থাকতে হবে। যদি এ মাত্রার উপরে থাকে তবে হৃদপিন্ড ও রক্তবাহীনালীর রোগ কুব দ্রুত দেখা দেবে একং কা মারাত্তক পরিণতিতে ঠেলে দেবে।
ডায়াবেটিস চিকিৎসা মূল ল্য যন্ত্রণামুক্ত দীর্ঘ জীবন। এই লক্ষে পৌছিবার জন্য দরকার রোগের গতি কেমন তা জানা। সময় মত জানা, নিয়মিত জানা,
ক) চিকিৎসা শুরু করলে ধীরে ধীরে রোগীর কষ্ট যায়। রোগী সুস্থ বোধ করেন। অতএব চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠলে ও রোগীর স্বাস্থের উন্নতি ঘটলে বুঝতে এবং তা বজায় রাখতে পারলে সুস্থ থাকা যাবে। তবে সুস্থতার পরিমাণ সবার কাছে এক নয়। তাই আদর্শগতভাবে রক্তের গ্লুকোজ জানা অপরিহার্য। রক্তে এর মাত্রা স্থির থাকে না; দিনে কয়েকবার বাড়তে বা কমতে পারে। কাজেই চিকিৎসা হের ফের করতে হয়। সেই জন্য একাবার রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা পরিমাপ করে চিকিৎসা পাল্টানো ঠিক নয়। চিকিৎসা পাল্টে নিলে তা মারাত্তক পরিস্থিতির দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। যারা ইনসুলিন নেন তাদের বেলার ইনসুলিনের রকম, বিশুদ্ধতা মাত্রা, কোন স্থানে ইনজেকশন নেয়া হল, এন্টি বডি তৈরী, প্রতিরোধ হরমোন নিঃসরন, রিসেপ্টরের অবস্থা ইত্যাদির উপর ইনসুলিন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে।
ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা ঝামেলামুক্ত নয়, বিশেষ চিকিৎসা ভিন্নতর হয়। বয়স্ক মৃদু ডায়াবেটিসদের জটিলতা কম দেখা দেয়, কাজেই তাদের রোগ লণ দূর হলেই চলে। প্রস্রাব পরীা করতেই হবে নুতবা হাইপো বা রক্তের গ্লুকোজ ঘাটতি ঘটতে পারে, যা কোনক্রমে ঘটতে দেয়া উচিত নয়।
যুবক, যুবতী ও মাঝ বয়সের পুরুষ পুরুষ মহিলাগণ যেহেতু রোগ নির্ণয় দীর্ঘ জীবন যাপন প্রত্যাশা করেন কাজেই তাদের মধ্যেই রোগ জটিলতা বেশী জটিলতা বেশী দেখা দেয়। কারণ ঔষধ ও পথ্যের নিয়ম শৃংখলা তারা মাঝে মাঝে মানতে পারেনা। যার যা ইচ্ছে তা করলে রোগ দমন থাকবে কেন? কি উপায়ে রক্তের গ্লুকোজ মনিটারিং করা যায়ঃ নিয়মের মধ্যে এলে রোগ দমন থাকবেনা কেন?
আদর্শ মনিটারিং এর নীচের গুণগুলো থাকতে হবেঃ
পদ্ধতি সরল হবে, সকলের ব্যবহার উপযোগী ও সস্তা হতে হবে, বিশ্বাসযোগ্য সঠিক ফলাফল দ্রুত পেতে হবে; শরীরে আঘাতহীন হতে হবে, যন্ত্রপাতি বহন যোগ্য হতে হবে, রোগীর ফলাফলের অর্থ বুঝতে এবং সে অনুসারে নিজের চিকিৎসা নিজেই চালিয়ে যেতে আগ্রহশীল গবে। দুঃখের বিষয় এসন আদর্শ পদ্ধতি পাওয়া যায় নাই। তবে ঘরে বসে বা নিজে নিজে রক্তের গ্লুকোজ মাপার উপায় মানুষ এখন জেনেছে। তার একটি হল-এক ফোটা রক্ত ফিল্টার কাগজে লাগিয়ে নিকটতম গবেষণাগার পাঠিয়ে রক্তে গ্লুকোজ পরিমাপ করা। এ পদ্ধতি যদিও সোজা তবুও রক্ত পরীার্ ফলাফল পেতে সময় নেয় অনেক।
গ্লুকোজ পরিমাপ করার ষ্টিপঃ নির্দেশক রংসহ গ্লুকোজ পারঅক্সিডেজ ষ্টিপবের হওয়ার পর ঘরে বসে রক্তের গ্লুকোজ নির্ণয় করা অনেক সহজ হয়েছে।কাগজ লাগান জায়গায় বড় এক ফোটা রক্ত লাগিয়ে এ মিনিট পর তা মুছতে হবে এবং দু’মিনিট হবার সাথে সাথে কৌটার গায়ের ৪নং-এর সাথসিটিং-এর রং বের হয়ে ফলাফল নির্ভুল ভাবে জানার উপায় পাওয়া গেছে, তবে ঘরে ষ্টক করে রাখলে ষ্টিপের কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
প্রস্রাব পরীক্ষা :
১. একটি কাঁচের নলে এক চা চামচ বেনোডিকট সলুসনে ৮ ফোটা প্রস্রাব মিশিয়ে গরম করে রং-এর পরিবর্তন দেখে প্রস্রাবে গ্লুকোজ আছে কিনা বুঝা যায়।ইহা খুবই দ্রুত ও সঠিক তবে এ পদ্ধতি একটু জটিল।
২. গ্লুকোজ পারঅক্সিডেজ ষ্ট্রিপ।
৩. কিনিটেষ্ট বড়ি।
৪. টিপস।
এই পদ্ধতি সমূহ প্রস্রাব পরীা সহজতর করেছে। শুধু প্রস্রাব পরীা করে রোগের গতির সঠিক অবস্থান জানা যায় না।
বিপাকে গোলযোগের মাত্রা নির্ণয় কর তা শুদ্ধ করার জন্য প্রস্রাবের গ্লুকোজ পরীা যথেষ্ট নয়। প্রস্রাব দ্বারা গত ১-২ ঘন্টা রক্তের গ্লুকোজ কি ছিল তা জানা যায় না, কারণ মুত্রঞ্চলিতে প্রস্রাব জমা হতে সময় লাগে। অতএব পরীা করে গড় প্রস্রাবের গ্লুকোজ মাত্রা পাওয়া যায়। সে কারণে প্রথম প্রস্রাব পরীা না করে দ্বিতীয় প্রস্রাবের গ্লুকোজ মাত্রা পাওয়া যায়। সে কারণে প্রথম প্রস্রাব পরীা না করে দ্বিতীয় বারের প্রস্রাব পরীা করাই ম্রেয়ঃ। তবে এ পরীার ৩৩% ক্ষেত্রে গ্লুকোজ না পাওয়া যেতে পারে ও ৬%ক্ষেত্রের গ্লুকোজ বৃদ্ধি পাওয়া যেতে পারে। খাবার আগে ও পরে প্রস্রাব পরীক্ষা করে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায় এবং তা থেকে ধারনা করা যায় রোগের গতি কেমন। এর গুণগতমান কম হলেও সস্তা, তড়িৎ তথ্যের জন্য সারা বিশ্বে এ পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে। দরিদ্র বিশ্বে প্রশ্বাব পরার প্রয়োজনীয়তা অনেক।
হিমোগ্লোবিন এ১ সি :
লোহিত কণিকা আজীবন (১২০ দিন লোহিত কণিকায় জীবন গ্লুকোজ গ্রহণ (এনজাইম ক্রিয়া ব্যতিরিকে) করে থাকে। কাজেই হিমোগ্লোবিন এ১ সি পরিমাপ করলে বিগত ১২০ দিনের গ্লুকোজের মাত্রা পাওয়া যায়। রক্তে দীর্ঘ স্থায়ী বাড়তি গ্লুকোজ থাকলে হিমোগ্লোবিন এ১ সি ও বেড়ে যাবে, এবং ডায়াবেটিসে তাই হয়ে থাকে।
অতএব একটি হিমোগ্লোবিন এ১ সি পরিমাপ করে ১২০ দিনের গড় রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা পেতে পারি। সেহেতু এ মাত্রা তাৎক্ষণিক রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বুঝায়। ১-২ মাস অন্তর এ পরীক্ষা করেও ডায়াবেটিসের অবস্থা নিরুপন করা যাবে।
উদ্যোগী হতে হবে রোগীকে নিজের কাজ নিজে করে স্বাবলম্বী হতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে একথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে প্রস্রাবে এসিটোন, এলবুমিন, গ্লুকোজ, রক্তের গ্লুকোজ ও সম্ভব হলে হিমোগ্লোবিন এ১ সি করে হোম মনিটারিং চলতে পারে। পরিমিত ও নিয়মিত ব্যায়াম সুস্থ ও প্রঅয় স্বাভাবিক জীবনের ল্েয ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এর সাথে হোম মনিটরিং ডায়াবেটিকদের করতেই হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা যাচাই করার উপায় :
রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রস্রাব পরীক্ষা অভুক্ত অবস্থায় রক্তের গ্লুকোজ খাওয়ার দু’ঘন্টা পরে রক্তে গ্লাইকোসাইলেটেড
মাত্রা আদর্শ খাওয়ার আগে (-) খাওয়ার আগে (-) খাওয়ার পরে জের মাত্রা মিঃ মোল/লিটার গ্লুকোজের মাত্রা মিঃ সোল/লিটার হিমোগ্লোবিন
গ্রহণ করা যেতে পারে (-) খাওয়ার পরে ৬.১-৮.০ ৮.১-১১.০ ৮.১-৯.০
এর বেশী হলেই অনিয়ন্ত্রিত (+) খাওয়ার পরে ৮.১-১১.০ ১১.১-১৪.০ ৯.১-১১.০